Tagged Under:

পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী সুখের জীবন না পরবর্তী অনন্ত স্থায়ী সুখের জীবন কোনটা নেবো আমরা -

By: Unknown On: 10:05
  • Share The Gag

  •  আমরা কোন জীবনের আকাঙ্খী হবো। এই পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী জীবন না পরবর্তী অনন্ত স্থায়ী জীবন। মহান আল্লাহ 
    তাঁর বাণী ও বার্তায় অর্থাৎ আল কোরআনে তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন ; “কিছু মানুষ এমন যারা বলে, “হে আমাদের সৃষ্টিকর্তা প্রতিপালক! দাও (যা দেবার) আমাদেরকে এই পৃথিবীতেই, অতএব নেই তাদের পরকালে পাওয়ার কিছুই।” আবার তাদের মধ্যে আছে এমন যারা বলে, “হে আমাদের সৃষ্টিকর্তা প্রতিপালক! দাও আমাদেরকে এই পৃথিবীতে সুন্দর একটা জীবন এবং পরকালের সেই সৌভাগ্যের অধীকারী যেন রক্ষা করো আমাদেরকে আগুনে পোড়ার শাস্তি থেকে। (২ : ২০০-২০১)অবিশ্বাসী ছাড়া বিশ্বাসীরা মনে করে এই পৃথিবীর জীবনের মৃত্যুর পর আর একটি জীবন আছে সেখানে এই জীবনের কর্মকান্ড গুলোর হিসাব-নিকাশের পর কারো জন্য অনন্তস্থায়ী চরম সুখের জায়গায় আর কারো জন্য চরম কষ্টের জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করবেন। মহান সৃষ্টিকর্তা প্রতিপালক আল্লাহ! মাঝামাঝি কোনো থাকার জায়গা নেই।
    যারা অবিশ্বাসী তাদের মধ্যে কিছু আছে চরম। তারা মনে করে সৃষ্টিকর্তা বলতে কিছুই নেই। এই বিশ্বভ্রাম্মান্ড একদিন হঠাৎ সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে যে প্রাণের অস্থিত্ব তাও বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়েছে। এবং মানুষও বিবর্তনের মাধ্যমে। এ পর্যায়ে এসে পৌছিয়েছে। আর একদিন হঠাৎ করেই এটি ধ্বংস হয়ে যাবে। পরকাল বলতে কিছু নেই। মৃত্যুতেই সব শেষ। এরা মনে করে, যে কয়দিন এই পৃথিবীর জীবনে বেঁচে থাকি আনন্দ স্ফূর্তি করেই কাটিয়ে দেবো। সুতরাং যা ইচ্ছা তা-ই করব। কোথাও কোনো বাধা বন্ধন নেই। যেভাবে হোক এই দুনিয়াটাকে আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে হবে এবং নিজেদের জীবনটাকেও জৌলসুসম্পূর্ণ করে সাজিয়ে তুলতে হবে। পারলে পৃথিবীবাসীদের জন্য কিছু করে যাও, অনেক নাম-ডাক হবে আর পৃথিবীবাসীও তোমার কর্মকান্ডে উপকৃত হয়ে তোমাকে স্মরণীয় করে রাখবে। এদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেছেন : “আর কিছুই নয় এই জীবনটা নিছক একটা খেলা আর ক্ষণিক বিনোদনের ভোজভাজী। (৬ : ৩২)
    এক শ্রেণীর মানুষ মনে করে আল্লাহ পরকাল বলতে কিছু নেই। গৌতম বুদ্ধ-ই সব। কৃচ্ছতা সাধন করে গৌতম বুদ্ধ যেভাবে নির্বাণ হয়ে গেছেন আমরাও বুদ্ধের মূর্তি বানিয়ে তার পূঁজা-আর্চনা করে এবং কৃচ্ছতা সাধন করে বুদ্ধের মতেহা নির্বাণ হয়ে যাবো। যেহেতু পরবর্তী জীবনে এই পৃথিবীর জীবনের কর্মকান্ডের কোনো হিসাব নেই এবং জান্নাত জাহান্নাম বলতে কিছু নেই তাই যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে দুনিয়ার জীবন কাটিয়ে দাও কোনো বাধা প্রতিবন্ধকতা নেই। খাও-দাও স্ফূর্তি করো পারলে মানবতার জন্য কিছু করো। পৃথিবীতে অনেক নাম ডাক হবে। না করলেও অসুবিধা নেই। এরা বুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। মহান আল্লাহ বলেছেন : “নি:সন্দেহ সেই সব লোক যারা কোনা আশা পোষণ করে না আমাদর সাথে সাক্ষাতের বরং সন্তুষ্ট এই পৃথিবীর জীবন নিয়েই এবং তারা (নিশ্চিত নিশ্চিন্ত) পরিতৃপ্ত এটা নিয়েই এবং এরা তারাই যারা আমাদের বাণী বার্তা ও নিদর্শন সমূহ নিয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন। এই যে লোকেরা স্থায়ী ঠিকানা তাদের জাহান্নাম সেই সবকিছুর বিনিময়ে যা তারা (এই পৃথিবীর জীবনে) উপার্জন করেছে। (১০ : ৭-৮)
    বিশ্বাসীদের কথা এই বিশ্বাসীদের মধ্যে আবার একটি শ্রেণী আছে যারা শুধু সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী। এরা মনে করে, সৃষ্টিকর্তা একজন আছেন বটে তবে তিনি সৃষ্টি করে দিয়েই তাঁর দায়িত্ব শেষ করেছেন। এখন তিনি বিশ্রামে আছেন। পরকাল বলতে কিছু নেই। এই পৃথিবীতেই শুরু এখানেই শেষ। সুতরাং যে কয়দিন বেঁচে থাকি পৃথিবীটা ভোগ করে নেই। এই শ্রেণীর মানুষও অবিশ্বাসীদের মতোই দুনিয়াটাকে জৌলুসপূর্ণ করে সাজাচ্ছে। সাথে সাথে নিজেদের জীবনটাকেও সেভাবে সাজিয়ে নিতে চেষ্টা করে। মহান আল্লাহ বলেছেন : ওরা বলে নয় এই জীবন আর কিছুই যতদিন বেঁচে থাকা আমাদের এই পৃথিবীতেই; আর কোনোদিন আমাদের ওঠানো হবে না নতুন কোনো জীবন নিয়ে। (৬ : ২৯)
    এবার সেই বিশ্বাসীদের কথা যারা কিতাবধারী। এদের মধ্যে একশ্রেণী মনে করে আমরা হলাম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর স্পেশাল বান্দাহ। আমাদের নবী ওজায়ের (আ.) আল্লাহর সন্তান সুতরাং আমরা মৃত্যুর পর সরাসরি সুখের জায়গায় অর্থাৎ জান্নাতে চলে যাবো। জাহান্নামের আগুন আমাদের স্পর্শও করবে না। এরা পৃথিবীর অন্যান্য মতালম্বীদের মানুষ হিসেবে গণ্য করে না। তাই পৃথিবীতে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য হেন কুট কৌশল নেই যা তারা করে না। পরকালের হিসাব নিকাশের ভয় নেই তাই দুনিয়ার জীবনটাকে জৌলুসপূর্ণ করে যে যেভাবে পারে নিজেকে সাজিয়ে নিচ্ছে, সাথে সাথে দুনিয়াটাকেও নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নিচ্ছে। এরা ইহুদী হিসেবে পরিচিত। এদের কিতাব তাওরাতকে এরা আল্লাহর কথার সাথে নিজেদের পছন্দ মতো কথা-বার্তা মিলিয়ে মিশিয়ে একাকার করে লিখে নিয়েছে।
    এবার সেই বিশ্বাসীদের কথা যারা বলে আমাদের রাসূল স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা; এদেরই আর এক দল বলে আমাদের রাসূল সৃষ্টিকর্তার সন্তান। এদের বিশ্বাস আমাদের রাসূল মারা যাবার সময় এই দুনিয়ায় আমাদের যত পাপ হয়েছে এবং ভবিষ্যতে হবে তার সব একাই ভোগ করে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন এবং আমাদের পাপ মোচন করে গেছেন। সুতারাং আমরা সরাসরি জন্নাতে চলে যাবো। তবে আমাদের মধ্যে যদি কারো জাহান্নামের আগুনে জ্বরতেও হয় তবে তাও কয়েক দিনের জন্য । তারপর আবার জন্নাতে চলে আসবে। যেহেতু চিরস্থায়ী জাহান্নামের যাবার ভয় নেই, তাই পৃথিবীর জীবনকে জৌলুসম্পূর্ণ করে গড়ে তোলার জন্য যা ইচ্ছা তাই করছে সাথে সাথে নিজেদের জীবনকেও আনন্দময় করে তোলার চেষ্টা করে। এরা খ্রিস্টান হিসেবে পরিচিত। এদের কিতাব ইঞ্জিল এরাও ইহুদীদের মতো তাদের কিতাবকে নিজেদের পছন্দ মতো কথাবার্তা দিয়ে আল্লাহর নাযিল করা কথা-বার্তার সাথে মিলিয়ে মিশিয়ে একাকার করে নিয়েছে। যা বাইবেল হিসেবে সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে পরিচিত।
    আর এক শ্রেণীর কথা যাদের বিশ্বাস মক্কার সেই কোরয়েশ মোশরেকদের মতো। অর্থাৎ আমাদের সৃষ্টিকর্তা আমাদের কথা সরাসরি শোনতে পাননা। তবে সৃষ্টিকর্তার এমন কিছু প্রতিনিধি এই পৃথিবীতে আছে যাদেরকে তিনি খুবই পছন্দ করেন। তারা যদি আমাদের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে সুপারিশ করে তাহলে এই দুনিয়ায় আমরা যে পাপ করি তা সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে ক্ষমা করিয়ে নিয়ে আমাদেরকে চিরসুখের জায়গায় পৌছিয়ে দিতে পারবে। তাই আমরা সৃষ্টিকর্তার সেই প্রতিনিধিদের মূর্তি বানিয়ে তাদের পূজা-উপসনা করি যেন তারা আমাদের ওপর সন্তুষ্ট থাকে। পরবর্তী পৃথিবীতে চিরকালীন কষ্টের জায়গায় থাকার ভয় কম তাই দুনিয়াটাকে সাজিয়ে নেওয়ার সাথে সাথে নিজেদের জীবনটাকেও জৌলুসপূর্ণ করে গড়ে তোলার প্রতিযোগীতায় লিপ্ত।
    আরো অনেক ধর্ম-বিশ্বাসী আছে যারা মনে করে আমাদের প্রধান ধর্মগুরু যেভাবে যেভাবে বলে সেভাবে সেভাবে ইবাদত বন্দেগী করলেই পরবর্তী পৃথিবীতে কষ্টের জায়গার পরিবর্তে সুখের জায়গায় যাওয়া যাবে। সুতরাং নিজেদের জীবনকে জৌলুসúূর্ণ করে গড়ে তোলার সাথে সাথে পৃথিবীটাকে জৌলুসপূর্ণ করে সাজিয়ে তোলো। এদের প্রত্যেকের আবার পৃথিবীর জীবনে পথ চলার নির্দেশনা সম্বলিত কিতাব আছে।
    এবার সেই বিশ্বাসীদের কথা যারা আল্লাহতে আত্মসমর্পিত জাতি হিসেবে পরিচিত অর্থাৎ মুসলিম। আমিও একজন মুসলিম হিসেবে পরিচিত। আমরা সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ এবং তাঁর কর্মকান্ডকে বিশ্বাস করি। আমাদের কাছে সর্বশেষ রাসূল এসেছেন এবং আমাদের কাছে দুনিয়ার জীবনে চলার নির্দেশিকা সম্বলিত সর্বশেষ কিতাব আছে। অন্যান্যদের কিতাব বিকৃত হলেও এই কিতাব অর্থাৎ আল কোরআন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ কর্তৃক সংরক্ষিত। তাই কোনো ধরনের কোনো বিকৃত হয়নি এবং হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। ভবিষ্যতে নতুন কোনো রাসূল ও কিতাব আসবে না। দুনিয়া ধ্বংসের আগ পর্যন্ত। মহান আল্লাহ দুনিয়ার সমস্ত মানুষকে সর্বশেষ রাসূলের আনুগত্য স্বীকার করে তাঁর সর্বশেষ নাযিল করা কোরআন মেনে নিয়ে এর নির্দেশনা অনুযায়ী এই নশ্বর দুনিয়ায় জীবন যাপনের আহ্বান জানিয়েছেন অর্থাৎ এক সত্যিকার আত্মসমর্পিত জাতি হিসেবে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।
    মুসলমানদের কাছে সারা বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ করার মতো দুনিয়ার জীবন যাপনের জন্য এমন একখানি কিতাব থাকা সত্যেও (যার নির্দেশনা অনুযায়ী চললে পরকালে জান্নাত নিশ্চিত) আমাদের মধ্যেই বহু মত ও পথ আছে পরকালের সুখের জায়গায় পৌছানোর ব্যাপারে। প্রথমেই রাসুল (স) এর বিদায় হজের ভাষণ নিয়ে তিন ভাগ। প্রথমত, আমি কোরআন ও আমার সুন্নাহ রেখে গেলাম (এখানে আবার বিভিন্ন ইমামের মত অনুসারে বিভিন্ন ভাগ আছে যারা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত নামে পরিচিত) দ্বিতীয়, আমি কোরআন ও আমার আহলে বায়েত রেখে গেলাম (এরা শিয়া হিসেবে পরিচিত; এদের মধেও বিভিন্ন ভাগ আছে।) তৃতীয়, আমি কোরআন রেখে গেলাম (দুনিয়ায় এই মতের অনুসারী খুবই কম)।
    মুসলমানদের এই ভিভাজনের মধ্যে থেকেও কেউ কেউ মনে করে আমাদের যিনি রাসূল তিনি পরকালের বিচার ফয়সালার দিন আল্লাহর সামনে সেজদায় পড়ে থাকবেন। যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁর প্রতিটি উম্মত অর্থাৎ যে একবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ বলেছে) সুখের জায়গায় অর্থাৎ জান্নাতে না পৌছাবে ততক্ষণ পর্যন্ত সেজদা থেকে মাথা তুলবেন না। সুতরাং দুনিয়াতে যত পাপ করিনা কেন রাসুল তো পার করে নিয়ে যাবেনই। কেউ কেউ বিশ্বাস করে একবার যখন কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু পড়েছি তখন একদিন না একদিন জান্নাতের সুখের জায়গায় পৌছানো যাবে। কারো কারো বিশ্বাস। এই দুনিয়ায় আল্লাহর কিছু প্রিয় বান্দাহ আছেন তাদের মধ্যে যারা মারা গেছেন তাদের মুরিদ হয়ে এবং মাঝে মাঝে তাদের কবর জিয়ারত করে যদি কিছু ধন-সম্পদ দান করি তবে যিনি বিচার ফয়সালার দিনে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করে সুখের জায়গা পর্যন্ত পৌছে দেবেন। আবার কারো কারো বিশ্বাস, যারা জীবিত আছেন তাদের মুরিদ হয়ে যদি তাদের নির্দেশনা মোতাবেক চলি তবে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করে সুখের জায়গায় পৌছিয়ে দেবেন। আবার কারো কারো বিশ্বাস মহান আল্লাহ তাঁর কিতাবে আমাদের দুনিয়ার জীবনে চলার জন্য কি কি নির্দেশনা দিয়েছেন তা যেহেতু আমাদের বোধগম্য নয়। তাই আমাদের বিশিষ্ট মুরব্বীরা কোরআন হাদীস থেকে আমাদের জন্য কিছু কিছু সহজ কিতাব লিখে দিয়ে গেছেন এবং লিখছেন। সুতরাং সেগুলো যদি আমরা মেনে চলি তবে পরকালের হিসাব-নিকাশের দিন খুব সহজেই জান্নাতে অর্থাৎ সুখের জায়গায় পৌঁছাতে পারব। কারো কারো মতে আল্লাহকে তো মানিই (এ মানার ক্ষেত্রে সচেতনতা খুবই কম) আর রাসূল মানি, নামায পড়লাম, রোযা রাখলাম, সম্পদ হলে হজ্জ করলাম। যাকাত দিলাম ও দান খয়রাত করলাম (চেতনাহীনভাবে এসব পালন করে) সুতরাং সুখের জায়গায় পৌছাতে আর ঠেকায় কে? কেউ কেউ মনে করে শুধু জুমার নামায পড়লাম। রমযানের রোজা রাখলাম তারাবির নামায পড়লাম। দান খয়রাত করলাম সুতরাং এভাবেই পরকালের সুখের জায়গায় পৌঁছানো যাবে। এ পর্যন্ত যে মুসলিমদের বর্ণনা দিলাম তাদের সকলের একটি জায়গায় মিল আর তা হলো আবিশ্বাসীদের মতো দুনিয়ার জীবন ভোগ করা।
    এবার তাদের কথা যারা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে নিজেদের জান-মাল দিয়ে জিহাদের মাধ্যমে আল্লাহর জমীনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা অর্থাৎ ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পরকালের হিসাব-নিকাশের দিন মহান আল্লাহর সামনে সত্যিকার বান্দা হিসেবে নিজেদেরকে দাঁড় করাবেন এবং জান্নাতে প্রবেশের পথ নিশ্চিত করবেন। এখানেও বিভক্তি এক এক দল এক এক পন্থা উদ্ভাবন করে প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং চালাচ্ছে। কেউ কেউ মনে করে, আল্লাহ কিতাবে যেভাবে যেভাবে বলেছেন এবং আমাদের রাসূল (স) যেভাবে সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন হুবহু সেভাবে বর্তমান আধুনিক পৃথিবীতে সম্ভব নয়। তাই এখান থেকে ওখান থেকে যুগোপযুগী কিছু চিন্তাধারা বা পদ্ধতির (কুফরদের চিন্তাধারা বা পদ্ধতি )মাধ্যমে চেষ্টা করলে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। এটা এই পন্থা অবলম্বনকারীদের বিশ্বাস অর্থাৎ ঈমানের পর্যায়ে চলে গেছে। কোনো কোনো দল বিশ্বাস করে আল্লাহ কিতাবে যেভাবে বলেছেন এবং রাসূল (স) যেভাবে তা বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন একেবারে সেভাবে সম্ভব নয় আবার অন্যের চিন্তাধারাও ধার করা যাবে না তবে কিছুটা কাট-ছাট করে দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে একটি গণ অভ্যুন্থানের মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। কোনো কোনো দলের বিশ্বাস, রাসূল (স) যেভাবে সশস্ত্র জিহাদের মাধ্যমে একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করে দেখিয়ে গেছেন ঠিক সেভাবে প্রচেষ্টা চালালে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে এবং এভাবে যুদ্ধ করেই সারা দুনিয়ায় আল্লাহর খেলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এছাড়াও আরো অনেক মতের মানুষ আছে যারা বিভিন্নভাবে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
    ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আল্লাহর জমীনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য যে যেভাবেই কাজ করুক না কেন তাদের সবার মধ্যে একটি জায়গায় মিল খুঁজে পাওয়া যাবে আর তা হলো, আল্লাহর পরিকল্পনার অপেক্ষা না করে নিজেরাই বিভিন্ন পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া এবং দুনিয়ার জীবনে প্রকারভেদ আরাম আয়েশে কাটিয়ে দেওয়ার জন্য প্রচেষ্টা। এক অর্থে একে দুনিয়াদারও বলা যায়। ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়, তবে তারা দুনিয়ার মানুষের সামনে প্রকাশিত নয়। আল্লাহই ভালো জানেন তাদের সম্পর্কে।
    যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে না এবং দুনিয়াটাকেই প্রথম ও শেষ হিসেবে বিশ্বাস করে তাদের কাজ কথা ভিন্ন কিন্তু যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে পরকালর সুখের জায়গায় পৌঁছাতে চায় বিভিন্ন পরিকল্পনাও চিন্তা-বিশ্বাসের মাধ্যমে তাদের সবার পিছনে মানবতার প্রধান শত্রু অভিশপ্ত শয়তানের কোনো না কোনো ওয়াসওয়াসা কাজ করছে। কারণ মানুষ সৃষ্টির সময় মহান আল্লাহর সাথে শয়তানের কথপোকথনের এক পর্যায়ে শয়তান আল্লাহকে বলেছেন, “হে আমার সৃষ্টিকর্তা যা দিয়ে এই বিভ্রান্তিতে ফেললে আমাকে (অর্থাৎ আদমকে সেজদা না করার নিজস্ব বুঝ বা জ্ঞান তো তুমিই আমার ভেতর দিয়েছ) সেটাকেই আমি তীব্র আকষর্ণীয় করে তুলব ওদের মধ্যে (অর্থাৎ মানুষের ভেতর আমি এই কথাটি ডুকিয়ে দেবো যে, তোরও তো একটা নিজস্ব বুঝ বা জ্ঞান আছে, তুই সেই অনুযায়ী চলবি) এবং অবশ্যই আমি (আমার মতো) সম্পূর্ণ বিভ্রান্ত করে ছাড়বো ওদের সকলকে। (আল হিজর : ৩৯)
    মানুষ এই দুনিয়ায় চলবে আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী কিন্তু দুনিয়ার দিকে তাকালে দেখা যায় যে, প্রায় সবাই শয়তানের সেই ওয়াসওয়াসার ফলে আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী সরাসরি না চলে মানুষের নিজস্ব বুঝ বা জ্ঞান সংমিশ্রণ করে পরকালের সুখের জায়গায় যাওয়ার চিন্তা বা পরিকল্পনায় বিভোর হয়ে আছে। অথচ মহান আল্লাহ বলেছেন : “যে-ই অনুসরণ করবে তোর ওদের (মানুষের) থেকে, আমিও ভরে দেবো জাহান্নাম তোদের সবাইকে দিয়ে। (আরাফ : ১৮)
    সর্বশেষ তাদের কথা যার অস্তিত্ব বর্তমান দুনিয়ায় খুঁজে পাওয়ার কষ্টকর। তাদের বিশ্বাস আল্লাহর প্রতিটি কথা রাসূল (স) যেভাবে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে দিয়ে উসওয়াতুল হাসানা অর্থাৎ অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব হয়েছেন ঠিক সেভাবেই প্রতিটি মুসলিমকে এই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর জীবনে আল্লাহর সকল আদেশ অনুযায়ী অর্থাৎ কোরআনের নির্দেশনা অনুসারে চলতে চেষ্টা করতে হবে এবং সারা দুনিয়ার মানুষকে এই পথে চলার আহবান জানাতে হবে। এভাবে না হলে দুনিয়ার মুসলমানদের গৌরবময় জীবন নিয়ে বেঁচে থাকা তো যাবেই না পরকালের সুখের জায়গায় পৌছানো যাবে না।
    বর্তমান দুনিয়া বিভিন্ন মত ও পথের সমন্বয়ে চলছে এবং প্রত্যেকেই তাদের মত ও পথ অনুযায়ী দুনিয়াটাকেও সাজিয়ে নিয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেন : “আসলে এই দুনিয়ার জীবনটা আর কিছু নয় তৎক্ষণিক মোহসৃষ্টির সামান্য আয়োজন। (৩:১৮৫) অথচ মানুষের দিকে তাকালে আপনার কখনো মনে হবে না, এই দুনিয়াটা ক্ষণস্থায়ী। বর্তমান এই জৌলুসপূর্ণ দুনিয়ায় আপনার নিজের কাছে দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কয়টি মুহূর্ত মনে হয় এখানে আমি বেশি দিন নেই। কেন আমরা মৃত্যু চিন্তাটাকে সার্বক্ষণিক মনের মধ্যে স্থান দিতে পারছি না ? যেখানে এটা নিশ্চিত যে, প্রতিটি প্রাণেরই মৃত্যু হবে। যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে না তারা যা-ইচ্ছা করতে পারে কিন্তু যারা পরবর্তী অনন্ত জীবনে বিশ্বাসী বিশেষ করে মুসলিম নামে পরিচিত তারা কেন এই দুনিয়াটাকে এতো ভালোবাসলো। এই দুনিয়া নিয়ে তাদের কেন এতো চিন্তা-ভাবনা এখানে স্থায়ীত্বের জন্য কেন এতো প্রতিযোগীতা। জীবনের সময় কতটুকু। ৮০ থেকে ১০০ বছর। আমার বয়স ৬০-এর কোটায় অথচ সেই ছোট্ট বয়সের ঘটনাগুলো মনে হয় এই তো সেদিনের ঘটনা। দিন যায় রাত আসে আবার দিন আবার রাত। মহান আল্লাহ বলেছেন : (আল্লাহ) বলবেন, “কতদিন বসবাস করেছ পৃথিবীতে বছরের গণনায় ? বলবে, (সেখানে) থেকেছি আমরা মাত্র একদিন অথবা দিনের একটা অংশ, একথা বরং জিজ্ঞেস করুন তাদের কাছে যারা গুণতে পারে। (আল্লাহ) বলবেন, “না! থেকেছ তোমরা তবে সামান্য সময়, যদি নিশ্চিত করে সেকথা তোমরা তা জেনে নিতে। (২৩ : ১১২-১১৪) এ-ই যখন অবস্থা তখন কেন এখানে থাকার এতো প্রচেষ্টাÑ নিজেকে প্রতিষ্ঠার চিন্তা। ছেলে-মেয়ের প্রতিষ্ঠার চিন্তা, ঘর-বাড়ির চিন্তা, আরাম-আয়েশের চিন্তা, ভালো-ভালো খাবার-দাবারের চিন্তা। শুধু এখানেই থেমে থাকা নয়Ñ সব ব্যাপারেই প্রতিযোগিতা। এসব করতে করতেই জীবনের আয়ু শেষ হয়ে যায়Ñ ওপারের সুখের বাড়িতে যাবার চিন্তা আসবে কিভাবে? যদিও আসে কিন্তু সবাই তো কম-বেশি এক একটি পথ অবলম্বন করে নিজেরাই সাজিয়ে নিয়েছি। আল্লাহ বলেছেন : “তোমরা পেতে চাও এই পৃথিবীর (জীবন) সামগ্রী, যেখানে আল্লাহ চাচ্ছেন (তোমাদের) পরকাল (এর সফলতা) আর আল্লাহ মহাশক্তিমান, সকল জ্ঞানের উৎস। (৮:৬৭)
    মহান আল্লাহ মানুষকে পাঠিয়েছেন এই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর জীবনে আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী চলার পরীক্ষা দেবার জন্য কিন্তু আদম ও হাওয়া (আ) কে দুনিয়ায় পাঠাবার পর থেকে মানুষ দুনিয়অর জীবনটাক এতো ভালোবেসে ফেলেছে, এতো আপন করে নিয়েছে যে, এখান থেকে আর চলে যেতে মন চায় না। মহান আল্লাহ বলেছেন : তোমরা ভালোবাসো এই পৃথিবীর জীবনটাকে আর উপেক্ষা করো পরকালকে। (৭৫ : ২০-২১) নিজেদের করা পথও পদ্ধতি আল্লাহর দেখিয়ে দেওয়া পথও পদ্ধতির সাথে মিল আছে কি নেই তা দেখার সময় কারো হাতে নেই। তবে আমরা যে যেভাবে নিজেদের পথ রচনা করে নিয়েছি তাতে কী শেষ পর্যায় পর্যন্ত পৌছাতে পারবো ? যেখানে মুসলমানদের এক বিজয়ী জাতি হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে সেখানে আমরা কেন এতো লাঞ্ছিত ও অবহেলিত এবং মর্যাদাহীন জাতি হিসেবে পরিচিত হচ্ছি। এ ব্যাপারটি নিয়ে আমরা কতটুকু চিন্তা-ভাবনা করি একা একা অথবা সম্মিলিত। আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলের জীবনী পড়লে মনে হয় কোথায় যেন আমাদের বড় ধরনের একটি গলদ রয়ে গেছে। আল্লাহ বলেছেন : “তাহলে কি তোমরা মানছ কিতাবের কিছু অংশ আর প্রত্যাখ্যান করছো বাকিটা সেক্ষেত্রে কি হতে পারে পুরস্কার (তাদের) যারা করবে এই কাজ তোমাদের মধ্যে এছাড়া চরম লাঞ্ছনা এই পৃথিবীর জীবনে আর কেয়ামতের দিন টেনে হেচড়ে নিয়ে যাওয়া হবে তোমাদেরকে কঠিন থেকে কঠিনতরো আযাবের দিকে, আল্লাহ আদৌ উদাসীন নন সেইসব থেকে যা যা তোমরা করছ। (২ : ৮৫)
    আমরা যারা মহান আল্লাহকে বিশ্বাস করি তারাই এই ক্ষণস্থায়ী জীবনের কিছু ব্যাপার এমনভাবে বিভ্রান্তিতে জড়িয়ে ফেলেছি যার প্রেক্ষিতে নিজেদের কাছেই পরবর্তী অনন্ত সুখের জীবনে প্রবেশ করার অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেছেন : “সৃষ্টি করিনি আমি জ্বিন ও মানুষকে আর কোনো উদ্দেশ্যে ইবাদত (গোলামী) করবে তারা শুধু আমার। (৫১ : ৫৬) এখানে ইবাদত বলতে আমরা শুধু নামায, রোযা, হজ, যাকাত পালন করা অর্থে মনে করেই সমস্ত গোলমাল পাকিয়ে বসেছি, আসলে এই ইবাদত হবে সামগ্রীক অর্থে আল্লাহ তাঁর সৃষ্ট-মানুষকে এই দুনিয়ার জীবনে যা যা করতে (প্রতিটি আদেশ আল্লাহ তাঁর সর্বশেষ কিতাব আল কোরআনে বলে দিয়েছেন) আদেশ করেছেন তার সব কয়টি (যেভাবে রাসূল (স) পালন করে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন) অক্ষরে অক্ষরে পালন করার প্রচেষ্টার নামই হলো ইবাদত। ইবাদত শব্দটি আরবী শব্দ আবদ থেকে এসেছে। আর আবদ এর অর্থে হলো গোলাম। গোলাম হলো সে যে তার মালিকের প্রতিটি আদেশ পালনে বাধ্য। মালিকের আদেশ লঙ্ঘন যেমন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তেমনি মানুষের যিনি স্রষ্টা অর্থাৎ মালিক সেই মহান আল্লাহর প্রতিটি আদেশ মানুষ মেনে চলতে বাধ্য। আমাদের প্রিয় রাসূলকে স. আল্লাহ তাঁর একজন আবদ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তাই রাসূল (স)-ও একজন আবদ বা গোলাম তার মালিকের আদেশ অক্ষরে অক্ষরে কিভাবে পালন করে তা তাঁর উম্মতকে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। কিন্তু মানুষ আল্লাহর সব আদেশ মেনে চলতে চেষ্টাও করেনা বিধায় এই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে এতো বিশৃঙ্খলা। “নি:সন্দেহে তোমাদের সৃষ্টিকর্তা প্রতিপালক সেই আল্লাহ, যিনি সৃষ্টি করেছেন ঐ আকাশমন্ডলি আর এই পৃথিবী – ছয় দিনে; তারপর তিনি আরোহণ করেছেন তাঁর নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে। ঢেকে দেয় রাত দিনকে, পেতে চায় তাকেই আবার খুব তাড়াতাড়ি; আর সূর্য ও চাঁদ এবং তারা ও নক্ষত্রগুলো আপন আপন কক্ষ পথে পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত তাঁরই আদেশক্রমে। জেনে রাখো তাঁরই এ সৃষ্টিজগত তাই (যে কোনো পর্যায়ের) আদেশ শুধু তাঁরই (চলতে পারে এ জগতে); সকল প্রাচুর্যে পূর্ণ আল্লাহ যিনি মালিক প্রতিপালক সমগ্র সৃষ্টিজগতের। (৭ : ৫৪)
    যেমন আল্লাহ বলেছেন : “আর শুধু আমাকেই ভয় পাও- ভয় করো। শুধু আমার অসন্তুষ্টি থেকে তোমরা নিজেদেরকে রক্ষা করো।” (২ : ৪০-৪১) মহান আল্লাহর এ দুটি আদেশের একটিও মানুষ আমলে নেয়নি। এ পৃথিবীতে মানুষের আগমনের পর থেকে এক মানুষ তারই মতো আর এক মানুষকেই ভয় করে এবং দুর্বল চিত্তের মানুষেরা সবল মানুষকে ভয় পায় তাই তাদের কাছ থেকে নিজেদেরকে যে কোনো উপায়ে রক্ষা করার চেষ্টা করে। কারণেই পৃথিবীতে মানুষের সামাজিক জীবনে এতো অশান্তি।
    যেমন ভরসার স্থল মহান আল্লাহ বলেছেন : “আর যেন (মানুষ) আল্লাহর ওপরেই ভরসা করে নিশ্চিত কোনো ভরসা যারা করতে চায়। (১৪ : ১২) মানুষের স্রষ্টা নিজ থেকে বলেছেন, তোমরা আমার ওপর ভরসা করো কিন্তু মানুষ নিকৃষ্ট প্রাণী কুকুরের ওপরে ভরসা করে তবু আল্লাহর ওপরে ভরসা করেনা।
    যেমন আমাদের প্রধান এবং একমাত্র শত্রু শয়তানের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন : “শয়তান কিন্তু মানুষের সুস্পষ্ট শত্রু” (১২ : ৫) যারা বিশ্বাস ও আস্থার অধিকারী হয়েছে, অনুসরণ করো না শয়তানের পদচিহ্নগুলো তাকে নিশ্চয় সে (শয়তান) আদেশ করবে যত অশ্লীল আর নিষিদ্ধ কাজগুলো করতে। (২৪ : ২১) এই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর জীবনে মানুষ তার চিরশত্রু শয়তানকে চিহ্নিত করতে পারেনি সৃষ্টির আদি থেকে। অথচ মানুষের সুখের জায়গায় পৌছাবার একমাত্র বাধাই হলো এই শয়তান। সে আল্লাহর সাথে চ্যালেঞ্জ করে এসেছে যে, “যে কারণে (বা যার কারণে) তুমি তাড়িয়ে দিলে আমাকে (অর্থাৎ চিরস্থায়ী জাহান্নামী বানানো আমাকে) এখন আমি ঘাপটি মেরে বসে থাকব ওদের জন্য (মানুষের জন্য) তোমার সরল সোজা পথে। তারপর আক্রমণ করব আমি ওদের সামনে দিয়ে এবং পেছন দিয়ে আর ডান দিক দিয়ে এবং বাম দিক দিয়ে। অত:পর পাবে না তুমি অধিকাংশকেই তোমার কৃতজ্ঞ। আল্লাহ বললেন, বেরিয়ে যা এখান থেকে তুই ধিকৃত তুই বিতাড়িত। যেই অনুসরণ করবে তোর ওদের (মানুষের) থেকে, আমিও ভরে দেবো জাহান্নাম তোদের সবাইকে দিয়ে। (৭ : ১৬-১৮) মানুষকে বার বার সাবধান করা সত্বেও (কোরআনের বহু আয়াতে শয়তান সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে) মানুষ কখনো সাবধান হয়নি (কিছু সংখ্যক ছাড়া) তাই মানুষেরত জান্নাত প্রাপ্ত এক অনিশ্চয়তার দোলায় দুলছে।
    যেমন মহান আল্লাহ বলেছেন : “তিনি (আল্লাহ) তোমাদের সাথেই থাকেন যেখানেই তোমরা থাকো না কেন এবং আল্লাহ সেই সব কিছুই যা যা তোমরা করো দেখেন। (৫৭ : ৪) তিনি (আল্লাহ) সম্পূর্ণ অবগত সেই সব ব্যাপারেও যা যা লুকানো (মানুষের) বুকের গভীরে। (৫৭ : ৬) এভাবে পরিষ্কার করে বলা সত্তেও মানুষ আল্লাহর ব্যাপারে উদাসীন। আল্লাহ সার্বক্ষণিক উপস্থিতিকে মানুষ উপেক্ষা করছে বা গ্রহ্য করেনা। যেমন মহান আল্লাহ বলেছেন : “আমাকে (আল্লাহকে) স্মরণে রেখো (এ স্মরণে সার্বক্ষণিক) তাহলে আমিও তোমাদেরকে স্মরণে রাখব। আর আমার কৃতজ্ঞতা আদায় করতে থাকো। কখনও অকৃতজ্ঞতায় লিপ্ত হয়ো না। (২ : ১৫২) সবকিছুই স্মরণে রাখলেও মানুষ আল্লাহকে স্মরণ করতে ভুলে যায়। আর সব ব্যাপারেই সবার কৃতজ্ঞতা আদায় করলেও আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করে এমন মানুষ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
    যেমন আল্লাহ বলেছেন : বানাবেনা বিশ্বাসীরা অবিশ্বাসীদেরকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিশ্বাসীদের ছাড়া। আর যে-ই করবে এটা তার কিছুই নেই আল্লাহ থেকে পাওয়ার কোনো ব্যাপারে। সেই রকম কোনো অবস্থা ছাড়া যে, বাঁচতে চাও তাদের হাত থেকে-এই আশঙ্কায় (অর্থাৎ আত্মরক্ষার জন্য বন্ধুত্ব) এই ভয়ই দেখাচ্ছেন তোমাদেরকে আল্লাহ তাঁর নিজের ব্যাপারে (অর্থাৎ কাউকে ভয় না করে শুধু তাঁকেই ভয় করো) কেননা আল্লাহর দিকেই সকলকে ফিরে যেতে হবে। (৩ : ২৮) আল্লাহর সাবধান বানীকে উপেক্ষা করে আমরা বিশ্বাসীরা অকাতরে অবিশ্বাসীদের বন্ধু বানিয়ে যাচ্ছি।
    যেমন আল্লাহ বলেছেন : (ও হে মানুষ!) নিজেদেরকে রক্ষা করো সেই আগুন থেকে যা প্রস্তুত করা হয়েছে আমার আহ্বানকে প্রত্যাখ্যানকারীদের জন্য কাজেই সম্পূর্ণ অনুগত হয়ে যাও আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের যেন তোমরা তার দয়ার অনুগ্রহ পেতে পারো। এখন রিতীমতো ছুটে চলো সেই দিকে, যেদিকে আছে রক্ষা তোমাদের সৃষ্টিকর্তা প্রতিপালকে আর সুন্দরতম সেই বনভূমি যার বিস্তৃতি ঐ আকাশমন্ডলী আর এই পৃথিবীর মতো (বিরাট বিশাল সীমাহীন) সাজিয়ে রাখা হয়েছে তাদের জন্য যারা এই পৃথিবীর জীবনে আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পেরেছিল। (৩ : ১৩১-১৩৩)Ñ আমরা যে কোন দিকে দিগভ্রান্তের মতো ছুটে চলছি। একটুও কি ভেবে দেখব না? সে সময়টুকুও কি আমাদের হাতে নেই?
    যেমন আল্লাহ বলেছেন : বলো, (হে রাসূল!) ও হে (নাযিল করা) কিতাবের দাবিদাররা। এসো, এমন একটি কথার দিকে যা একইরকম আমাদের কাছে এবং তোমাদের কাছেও গোলামী করব না আমরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো আর না আমরা অংশীদার বানানো তাঁর সাথে কাউকে বা কোনোকিছুকে আর না আমরা মেনে নেবো আমাদের কতিপয়কে অন্য সবার বিধানদাতা মনিব আল্লাহ ছাড়া।” এর পরেও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে এখন তোমরা বলোÑ দেখে নাও আমাদেরকে যে আমরা সম্পূর্ণ (আল্লাহর প্রতি) সমর্পিত। (৩:৬৪) আজ তারা সম্পূর্ণ হতাশ যারা আমাদের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে তোমাদের (নির্ণয় করে নেওয়া) জীবন পদ্ধতির ব্যাপারে। কাজেই ওদেরকে ভয় করো না বরং ভয় করো আমাকে। আজ আমি চূড়ান্ত করলাম তোমাদের জন্য তোমাদের জীবন পদ্ধতি এবং পূর্ণ করেছি তোমাদের ওপর আমার করুণার প্রাচুর্যপূর্ণ আশীষ আর পছন্দ করেছি তোমাদের জন্য (আমার প্রতি সম্পূর্ণ সমর্পিত জীবন) ইসলামকে (এই পৃথিবীতে তোমাদের) জীবন যাপনের পদ্ধতি হিসেবে। (৫:৩) অন্যান্যদের কথা আর কি বলব, আমরা মুসলিমরাই তো এখন আল্লাহতে সম্পূর্ণ সমর্পিত জাতি হিসেবে পরিচিত নই। আর আজকের দিনে সারা বিশ্বজুড়ে মানব রচিত আইন কানুন দিয়ে এবং অধীক সংখ্যক মানুষের রায়ের চিত্তিতে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার যেসব কর্মপদ্ধতি চলছে কার্যত তার সবই প্রভ’ত্ব বা খোদায়ী দাবি করার নামান্তর। বরং সরাসরি আল্লাহর প্রতিপক্ষ হয়ে বিদ্রোহের ঘোষণা। যা ক্ষমার অযোগ্য পাপÑ শিরক।
    যেমন রিযিকের অর্থাৎ জীবিকার ব্যাপার এই দুনিয়ার প্রতিটি প্রাণীর জীবন ধারণের জন্য যা কিছু প্রয়োজন তার যবতীয় আয়োজন সৃষ্টিকর্তা প্রতিপালক আল্লাহ নিজের দায়িত্বে রেখেছেন। আল্লাহ বলেছেন : “একমাত্র আল্লাহ তিনিই সকলের জীবিকাদাতা। (৫১ : ৫৮) আর নেই এমন কোনা প্রাণী ভূ-পৃষ্ঠের উপরে দায়িত্ব নয় আল্লাহর তার জীবিকার এবং তিনিই জানেন তার বসবাসের স্থান (কোথায়) আর (কোথায়) তাকে সাময়িকভাবে সংরক্ষণ করা হবে। এসব কিছুই লেখা আছে একটি উন্মুক্ত কিতাবে। (১১:৬) আল্লাহর ওয়াদা সত্য। (৪:১২২) আল্লাহর কথার কোনো পরিবর্তনকারী নেই। (৬:৩৪) অথচ মানুষ আল্লাহর এই রিযিকের দায়িত্ব নেওয়ার ব্যাপারটি শয়তানের প্ররোচনায় বিশ্বাসে নিতে পারেনি। তাই এই নিজ দায়িত্ব নিয়ে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ছেড়ে অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অর্জনের জন্য রাত দিন শুধু এই চিন্তায় মশগুল থেকে আল্লাহর আদেশ পুরোপুরি পালন করা থেকে দূরে সরে আছে।
    এই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে মানুষ পরীক্ষা দিতে এসেছে অবশ্যই তাকে এই পরীক্ষায় পাশ করতেই হবে না হলে সামনে মহাবিপদ অর্থাৎ জাহান্নাম। মানুষ এ পৃথিবীতে একটু সুখের আশায় কত কিনা করে অথচ এর স্থায়ীত্ব খুবই কম সিন্দুতে কিছু পরিমাণ। আর যে অনন্ত সুখের কথা আল্লাহ বলেছেন তার কোনো শেষ সীমা নেই। অনন্ত অনন্তকাল। এই সুখের জন্য মানুষকে যে খুব বেশি কিছু করতে হয় এমন নয়! শুধু ধৈর্য ধরে করতে হবে যেটুকু যেটুকু আল্লাহ করতে বলেছেন। যে বোঝ মানুষ বইতে পারেনা তা আল্লাহ চাপিয়ে দেন না। বলেছেন : এমন কোনো ইচ্ছা পোষণ করেন না আল্লাহ যে, চাপিয়ে দেবেন তোমাদের ওপর কোনো অসুবিধা, বরং তিনি চান তোমাদেরকে (মানসীকভাবে) পরিচ্ছন্ন করতে আর সম্পন্ন করতে তাঁর বিশেষ অনুগ্রহ তোমাদের ওপরে যেন তোমরা (তাঁর) কৃতজ্ঞ হয়ে উঠতে পারো। (৫:৬)
    উপরে বর্ণিত আল্লাহর কথাগুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে মানুষ যদি রিযিকের ব্যাপারটি এবং এর ব্যয় এর খাতটি পরিষ্কার করতে পারত তাহলে অনেক গোলক ধাঁ ধাঁ থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর আহ্বানে ছুটতে পারত। তাই আল্লাহর ওপর ভরসা করে বসে না থেকে আল্লাহর ওপর ভরসা করে রিযিকের অর্থাৎ জীবিকার সন্ধান করা। হালাল উপায়ে জীবিকার জন্য যা পাওয়া যায় অর্থাৎ অন্যের অধীনে কাজ বা ব্যবসা (ছোট বা বড়) যা-ই আল্লাহ দেন তা-ই করতে হবে। তাতে আল্লাহ যতটুকু দেবেন ততটুকুতেই আলহামদুলিল্লাহ বলে সন্তুষ্ট চিত্তে জীবন ধারণ করতে হবে। এই অবস্থায় যদি আল্লাহ কখনো কারো রিযিক বাড়িয়ে দেন তবে আলহামদুলিল্লাহ বলতে হবে আর যদি কমিয়ে দেন তবুও ধৈর্য ধারণ করে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। নারাজ হওয়া যাবে না। নারাজ হলেই আল্লাহর ওপর ভরসা কমে যাবে। আর এতেই আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। আর আল্লাহ অসন্তুষ্ট হলে পরকাল অন্ধকার। আর আল্লাহ যাকে যতটুকু দেবেন তা থেকেই আল্লাহর পথে ব্যয় করতে হবে। আর জানতে চায় (হে রাসূল!) তোমার কাছে (আল্লাহর পথে) কতটা কি ব্যয় করবে, বলে দাও, যা তোমাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত। এভাবেই সুস্পষ্ট করে দেন আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর নির্ধারিত নীতিসমূহ যেন তোমরা গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করো এই দুনিয়া এবং পরবর্তী দুনিয়া সম্পর্কে। (২ : ২১৯-২২০) মনে রাখতে হবে এই প্রয়োজন যেন কখনো ভোগ বিলাসের পর্যায়ে চলে না যায়। আল্লাহ আরো বলেন : “কস্মিনকালেও নাগালে পাবেনা পুন্যের মানসিকতা যে পর্যন্ত না অকাতরে ব্যয় করতে পারবে (আল্লাহর পথে) সেই সব থেকে যা তোমরা ভালোবাস; যখন যা তোমরা খরচ করবে একটা কিছু। তখন আল্লাহ অবগত থাকবেন। (৩ : ৯২) রিযিকের সন্ধান ও ব্যয়ের সাথে সাথে আল্লাহর দেওয়া বিধানগুলো সঠিকভাবে পালন করতে হবে যেভাবে শরীয়তে বর্ণিত আছে।
    আর যে বিষয়টি প্রতিটি মুসলিমের করণীয় তাহলো, জ্ঞান হওয়ার পর থেকে আল্লাহর পথ নির্দেশনা সম্বলিত কিতাব কোরআন বুঝে পড়া এবং এখানে আল্লাহ কি কি কথা বলেছেন তা জানা। জানার পর এই কথাগুলো নিজেমেনে চলতে চেষ্টা করার সাথে সাথে অন্যকেও জানানো অর্থাৎ একজন দায়ী ইলাল্লাহ হওয়া। আল্লাহ বলেছেন : “কে উত্তমতম কথা বলায় তার চাইতে। যে ডাকে (মানুষকে) আল্লাহর দিকে এবং বাস্তবায়িত করে তার বিশ্বাসের সকল দাবি। বলে, আমি তাদেরই একজন যারা (আল্লাহর প্রতি) সম্পূর্ণ সমর্পিত। (৪১ : ৩৩) আর থাকতে হবে তোমাদের মধ্যে একটি দল যারা ডাকবে (মানুষকে) চির কল্যাণের দিকে এবং উৎসাহিত করবে, প্রেরনা যোগাবে নিজেকে তার বাস্তব নমুনা হিসেবে উপস্থাপন করে, নির্দেশ করবে প্রকৃত মানবতার আর নিষেধ করবে বাধা দেবে যা মানবিয় অকল্যাণ ও মন্দ কর্ম থেকে; বস্তুত এরাই তারা যারা চূড়ান্ত সফলতায় উত্তীর্ণ হবে। (৩ : ১৪)
    তবে এই “ডাক” মানুষের নিজস্ব কোনো প্রক্রিয়ায় বা পরিকল্পনায় নয়। ডাকতে হবে আল্লাহর পাঠানো অহী বা বাণী মানুষের কাছে পৌছে দিয়ে নবী রাসূলরা যেভাবে তাদের কাজ সম্পন্ন করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন :
    মহান আল্লাহ আরোও বলেন : “সত্য তা-ই যা তোমার সৃষ্টিকর্তা প্রতিপালকের কাছ থেকে আসে। কাজেই তুমি হবে না তাদের কেউ যারা সংশয়ের মধ্যে আছে। (৩ : ৬০) ও হে মানুষ এসে গেছে তোমাদের কাছে সত্য মিথ্যা নির্ণয়ের চূড়ান্ত মাপকাঠি তোমাদের সৃষ্টিকর্তা প্রতিপালকের কাছ থেকে এবং নাযিল করে দিয়েছি আমরা তোমাদের প্রতি এমন এক আলো (কোরআন) যা উজ্জল উদ্ভাসিত। (৪ : ১৭৪)

    আল্লাহর বাণী দিয়ে সে যেমন ডাকবে সাধারণ মানুষকে তেমনি সাবধান করবে প্রতিষ্ঠিত স্বৈরাচারী রাষ্ট্রশক্তিকে এবং আল্লাহদ্রোহী সমাজ নেতাদের যারা আল্লাহ্র আইন মোতাবেক রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালনা করেনা।” কেননা যারা বিচার ফয়সালা করেনা সে অনুযায়ী যা আল্লাহ নাযিল করেছেন, তাহলে এই লোকেরা তারা যারা “কাফের” (আল্লাহ্র কিতাবকে অস্বীকার, উপপেক্ষা ও প্রত্যাখ্যানকারী); …… তারা জালিম (এখানে জালিম শব্দের তাৎপর্য হবে মোশরেকÑ
    নি:সন্দেহে আল্লাহর সাথে কোনোভাবে কাউকে বা কোনো কিছুকে অংশীদার করা সবচাইতে বড় অপরাধ-(৩১ : ১৩) ……. তারা ফাসেক (মুখে আল্লাহকে স্বীকার করে কাজে করেনা) (৫ : ৪৪, ৪৫, ৪৭)। এ ডাকে কোনো জোর-জবরদস্তী নেই। করণ এই ডাক শুনে যে-ই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থী হয়ে হেদায়েত চাইবে মহান আল্লাহ তাকেই হেদোয়েত দেবেন। কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় অন্য মানুষকে হেদায়েত দেওয়া। আর মহান আল্লাহ কার মাধ্যমে তার দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করবেন তা তাঁর একান্ত নিজস্ব। বলো (হে রাসূল) হে আল্লাহ, তুমিই মালিক সকল রাজত্বের, তুমিই দাও (এ পৃথিবীর কোনো) রাজত্ব ক্ষমতা যাকে তুমি চাও, আবার তুমিই কেড়ে নাও সে রাজত্ব যার কাছ থেকে তুমি চাও, আর সম্মান করো যাকে তুমি চাও এবং লাঞ্ছিত করো যাকে তুমি চাও, তোমার হাতেই সকল কল্যাণ; নি:সন্দেহে তুমি প্রতিটি জিনিসের ওপর ক্ষমতা প্রয়োগে সক্ষম। (৩:২৬) মহান আল্লাহ বলেছেন, আমরা জানি সেই সব (হে রাসূল) যা যা ওরা বলছে আর তুমি নও ওদের ওপরে জোর খাটাবার কেউ; অতএব স্মরণ করিয়ে দিতে থাকো এই কোরআন দিয়ে যে ভয় করবে এই বাণী (সে সঠিক পথে ফিরে আসবে) (৫০ : ৪৫) এবং অহি করা হয়েছে আমার প্রতি এই কোরআন যেন আমি (রাসূল) সাবধান করে দেই এই কোরআন দিয়ে আর তাকেও যার কাছে তা পৌছাবে। (৬ : ১৯) (আমি মুহাম্মদ তোমাদের পর্যন্ত তেইশ বছর ধরে সম্পূর্ণ কোরআনক বাস্তবায়িত করে পৌছে দিয়ে গেলাম। এখন তোমরা পৃথিবীর বাকি মানুষের কাছে পৌছাবে ঠিক আমার মতো এর বাস্তব নমুনা হয়ে।) অর্থাৎ যার কাছেই এই কোরআন পৌছাল তার কাছে রাসূল (স) এর সুসংবাদ ও সাবধান বাণী পৌছে গেল। কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই ধারাবাহিকতা চলতে থাকবে। কেননা মুহাম্মদ (স) কে শুধু তাঁর সময়কালের জন্যই পাঠানো হয়নি। তাঁকে পাঠানো হয়েছে কেয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীতে আগত সকল মানুষের জন্য। তাঁর সময়কাল থেকে কেয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীতে আগত সকল মানুষ তাঁর রেসালাতের আওতাভুক্ত। তিনি চলে যাবার পর থেকে এ দায়িত্ব এখন তাঁরই মতো করে পালন করার কাজ তাঁর উম্মত বলে পরিচয়দানকারী প্রত্যেকের ওপরেই সমানভাবে ন্যাস্ত। মহান আল্লাহ বলেছেন : আর এভাবেই নিয়োজিত করলাম আমরা তোমাদেরকে (আমাদের সাথে সকল মানুষের) যোগাযোগ স্থাপনকারী একজাতি হিসেবে যেন তোমরা হতে পারো সাক্ষীদাতা সকল মানুষের ওপরে আর রাসূল হতে পারেন (কেয়ামতের দিন) তোমাদের ওপর সাক্ষীদাতা। (২ : ১৪৩) মহান আল্লাহ আরো বলেছেন : “কতো স্পষ্ট করে বিভিন্নভাবে বর্ণনা কিেছ আমরা মানুষের জন্য এই কোরআনে প্রতিটি বিষয় দৃষ্টান্ত সহকারে। তারপরেও মানতে রাজি হয়না অধিকাংশ মানুষ যা সরাসরি প্রত্যাখ্যান আর অকৃতজ্ঞতা ছাড়া আর কিছু নয়। (১৭ : ৮৯)
    মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্ট মানুসের জন্য দুটি পথই খোলা রেখেছেন এবং এর শেষ গন্তব্যস্থল কোথায় তাও জানিয়ে দিয়েছেন স্পষ্ট করে। এখন এই মানুষের ওপরেই দায়িত্ব তার শেষ ঠিকানা খুঁজে নেওয়া। আসুন এবার আমরা দেখে নেই আল্লাহ তাঁর কিতাবে কিভাবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।
    ১. এরাই তারা যারা কিনে নিয়েছে পৃথিবীর জীবন পরবর্তী অনন্ত জীবনের বিনিময়ে অতএব এতটুকু লাঘব করা হবে না তাদের শাস্তির যন্ত্রণা আর না তারা কোনো সাহায্য পাবে। (২ : ৮৬)
    ২. অতএব কে মুখ ফিরিয়ে নেবে ইবরাহীমের আদর্শ থেকে যদি না সে মূর্খ বানাতে চায় তার নিজেকে? এটা তো স্পষ্ট, বাছাই করেছি আমরা তাঁকে এই পৃথিবীতে এবং নি:সন্দেহে সে পরকালেও গণ হবে কৃতকার্যদের অন্যতম। (২:১৩০)
    ৩. সাজিয়ে মোহময় করে রাখা হয়েছে তাদের জন্য যারা প্রত্যাখ্যান করেছে আল্লাহর আহ্বান এই পৃথিবীর জীবনে, তাই উপহাস করে তাদেরকে নিয়ে যারা বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপন করেছে আল্লাহর আহ্বানে। আর যারা (জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে) চেষ্টা করছে নিজেদেরকে রক্ষা করতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে তারা থাকবে ওদের মাথার ওপরে কেয়ামতের দিন; তখন আল্লাহ জীবন সামগ্রী দেবেন যাকে চাইবেনÑ কোনো হিসাব ছাড়া। (২:২১২)
    ৪. তীব্র আকর্ষণীয় করে দেওয়া হয়েছে মানুষের কামনা বাসনার তৃপ্তি আকঙ্খা নারী ও পুত্র সন্তান আর ঢের লাগানো গচ্ছিত সম্পদ সোনা ও রূপার এবং নির্দিষ্ট চিহ্নযুক্ত ঘোড়া, গৃহপালিত পশু আর ফসলের জমি থেকে এ আয়োজন এই পৃথিবীর জীবনের; আর আল্লাহ তাঁর কাছে আছে ফিরে যাবার সুন্দরতম অনন্ত জীবন। (৩ : ১৪)
    ৫. যে আশা করবে তার কর্মের ফলাফল এই পৃথিবীতে, দিয়ে দেবো তাকে সেখান থেকেই আর যে আশা করবে প্রতিদান পরকালের দেবো তাকে সেখান থেকেই শীঘ্রই আমরা পুরষ্কৃত করব তাদেরকে যারা কৃতজ্ঞ। (৩:১৪৫)
    ৬. সেই দিন চাইবে তারা যারা আল্লাহর আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং বিরোধিতা করেছিল রাসূলের- যদি ফাঁক হয়ে মাটি তাদেরকে গ্রাস করে নিত: কেননা লুকাতে পারবেনা তারা (সেদিন) আল্লাহর কাছে কোনো একটি কথাও। (৪:৪২)
    ৭. যুদ্ধ করতেই হবে তাদেরকে আল্লাহর পথে যারা বিক্রি করে দিয়েছে এই পৃথিবীর জীবন পরকালের বিনিময়ে। আর যেই যুদ্ধ করবে আল্লাহর পথে, হয় নিহত হবে অথবা বিজয়ী যে কোনো অবস্থায়ই আমরা দেবো তাকে সুমহান পুরস্কার। (৪ : ৭৪)
    ৮. নি:সন্দেহে তারা যাদের প্রাণ হরণ করবে ফেরেশতারা এমন অবস্থায় যে, তারা নিজেরাই সর্বনাশ করছে তাদের নিজেদের, বলবে, (ঈমানের দাবিদার হয়েও) কিসের মধ্যে ছিলে তোমরা? তারা বলবে, আমরা নিতান্তই অসহায় অক্ষম ও নির্যাতিত ছিলাম আমাদের এলাকায়। ফেরেশতারা বলবে, আল্লাহর পৃথিবী কি বিস্তীর্ণ উম্মুক্ত ছিল না। (যেখানে খুশী) হিজরত করে চলে যেতে পারতে তোমরা তার মধ্যে আসলে এরাই তারা যাদের চূড়ান্ত ঠিকানা জাহান্নাম; যা নিকৃটতম অবস্থানের জন্য। (৪ : ৯৭)
    ৯. ওহে জ্বীন ও মানব সমাজ। আসেনি কি তোমাদের কাছে রাসূলগণ তোমাদের মধ্যে থেকেই (দুই সমাজকে একই সাথে যে সম্বোধন করা হচ্ছে এর অন্তর্নিহিত কারণ হলো, মানুষের জন্য যখন যে সময়ে যিনি আল্লাহর প্রেরিত রাসূল, সে সময়ে জ্বিনদের জন্যও তিনি রাসূল) যারা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করত তোমাদের কাছে আমাদের বাণী ও বার্তা এবং তারা (বার বার) সাবধান করতে তোমাদেরকে তোমাদের এই সাক্ষাতের ব্যাপারে আজকের দিনের? তারা বলবে, সাক্ষ্য দিচ্ছি আমরা (আজ) আমাদের নিজেদের বিরুদ্ধে। আসলে প্রতারিত করেছিল তাদেরকে (তাদের) পৃথিবীর জীবনটাই। তখন তারা এই সাক্ষীও দেবে তাদের নিজেদের বিরুদ্ধে যে, (পৃথিবীর জীবনে) তারা ছিল আল্লাহ বাণীও বার্তা এবং নবীগণের সাবধান বাণীর প্রত্যাখ্যানকারী। (৬ : ১৩০)
    ১০. যারা মনে করে নিয়েছিল আল্লাহর মনোনীত জীবন পদ্ধতি (এর অনুশীলনী) নেহায়েত একটা বিনোদন আর খেলাধুলার মতো অবসরে উপভোগ্য জিনিস), আসলে ধাঁধাঁয় ফেলে দিয়েছিল ওদেরকে পৃথিবীর জীবন, তাই আজকের দিনে আমরা ভুলে থাকব ওদেরকে (ঠিক) সেইভাবে যেভাবে ওরা ভুলেছিল আজকে দিনের মুখোমুখী হওয়ার কথা। আরও এই কারণে যে, ওরা ছিল আমাদের বাণী ও বার্তাসমূহের অবিশ্বাসী বিরোধী। (৭;৫৯)
    ১১. ওহে ঈমানের দাবীদাররা! কি হলো তোমাদের যখন বলা হলো তোমাদেরকে বেরিয়ে পড়ো আল্লাহর পথে (তখন) ধ্বংসে পড়লে মাটির দিকেই, তোমরা কি বেছে নিলে পৃথিবীর জীবনটাকেই পরবর্তী অনন্ত জীবন ছেড়ে? তাহলে (শুনে রাখো) যা কিছু ভোগ বিলাসের সামগ্রী এই পৃথিবীরদ জীবনে (দেখতে পাচ্ছে) পরকালে তা অতিতুচ্ছ কিছু ছাড়া আর কিছুই মনে হবে না। (৯ : ৩৮)
    ১২. ওহে মানুষ! এই যে তোমাদের বাড়াবাড়ি এগুলো সব তোমাদের বিপক্ষেই যাচ্ছে : (যে কারণে এসব করছ) অত্যন্ত নগণ্য আয়োজন এ পৃথিবীর জীবনের। তারপর আমাদের কাছেই ফিরিয়ে আনা হবে তোমাদেরকে; তখন আমরা বলে দেবো তোমাদেরকে সেই সব কিছুই যা যা তোমরা করছিলে। (১০ : ২৩)
    ১৩. সামান্য কিছু ভোগের সামগ্রী (দিয়ে রেখেছি ওদেরকে) এই পৃথিবীতেই তারপর আমাদের কাছে ফিরে আসতে হবে ওদরেকে। তখন আমরা মজা চাখাব ওদেরকে অত্যন্ত কঠিন শাস্তির, সেই সব কিছুর বিনিময়ে যেসব সত্য ওরা জেনেশুনে গোপন করেছিল। (১০ : ৭০)
    ১৪. যে-ই আকাঙ্খী হবে এই পৃথিবীর জীবন এবং তার সাজ-সরঞ্জাম (যা অর্জনের জন্য তারা তাদের দিন রাত একাকার করে দেয়) আমরা ফলাফল দিয়ে দেই পরিপূর্ণভাবে তাদেরকে তাদের সকল কৃতকর্মের এখানেই এবং তারা এসবের মধ্যে এতটুকু কম পায় না। এরাই সেই লোক কিছুই নেই তাদের জন্য পরবর্তী অনন্ত জীবনের আগুন ছাড়া এবং নিষ্ফল হয়ে যাবে সেই সবকিছুই যা যা নির্মাণ করেছিল এই পৃথিবীতে আর বাতিল বলে গণ্য হবে সেইসব পুণ্যকর্ম যা কিছু তারা করেছিল। (১১ : ১৫-১৬)
    ১৫. আল্লাহ খুলেছেন প্রাচুর্যের দুয়ারু যার জন্য তিনি চান এবং (জীবিকার) নিয়ন্ত্রিত পরিমাণ, তবুও আনন্দে তৎফুল্ল তারা এই পৃথিবীর জীবন নিয়েই, যেখানে নয় এই পৃথিবীর জীবনটা পরবর্তী অনন্ত জীবনের কাছে সামান্য আয়োজন ছাড়া আর কিছুই। (১৩:২৬)
    ১৬. সেই সব লোক যারা (ভালোভাবে বেঁচে থাকতে হবে এই অজুহাতে) অগ্রাধিকার দেয় এই পৃথিবীর জীবনকে পরবর্তী অনন্ত জীবনের চাইতে; কার্যত এরাই ফিরিয়ে রাখে (মানুষকে) আল্লাহ পথ থেকে আর খুঁজে পেতে চায় তার কোনো না কোনো বক্রতা। (১৪:৩)
    ১৭. এখানে যেসব জিনিসপত্র দেওয়া হয়েছে তোমাদেরকে তাতো এই পৃথিবীর জীবনের ক্ষণস্থায়ী ভোগ্য সামগ্রী এবং তার সাময়িক সাজ-সরঞ্জাম, অতপর যা আছে আল্লাহর কাছে তা যেমন উন্নত উচ্চতর তেমনি অনন্ত স্থায়ী বিষয়টা কি তোমরা বুঝতে পারো না। (২৮ : ৬০)
    ১৮. কিছ্ ুনয় এই পৃথিবীর জীবনটা কিছুক্ষণের বিনোদন এবং একটা খেলা। আর পরকালের যে ঘর সেটাই তো জীবন (অনন্ত স্থায়ী), যদি তারা জানতে পারত। (২৯:৬৪)
    ১৯. ওরা জানে এবং চেনে বাইরের দিকটা এই পৃথিবীর জীবনের; এর পরবর্তী যে অনন্ত জীবন সে সম্পর্কে ওরা সম্পূর্ণ উদাসীন। (৩০:৭)
    ২০. ওহে মানুষ বাঁচাও নিজেদেরকে তোমাদের সৃষ্টিকর্তারপ্রতিপালকের অসন্তুষ্টি থেকে এবং ভয় করো সেই দিনের উপকৃত হবে না কোনো পিতা তার পুত্র থেকে আর না কোনো পুত্র তার পিতা থেকে এতটুকু। নি:সন্দেহে আল্লাহর ওয়াদা চূড়ান্ত নির্ধারিত। অতএব কোনোভাবেই ধোঁকায় না ফেলতে পারে তোমাদেরকে এই পৃথিবীর জীবন আর না কিছুতেই প্রতারিত করতে পারে তোমাদেরকে আল্লাহর ব্যাপারে (সবই তিনি ক্ষমা করে দেবেন এই কথা বলে) সবচাইতে বড় সেই ধোঁকাবাজ (শয়তান)। (৩১ : ৩৩)
    ২১. বলো (হে রাসূল) হে আমার গোলাম যারা বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপন করেছ (আমার প্রতি) বাঁচাও নিজেদেরকে তোমাদের সৃষ্টিকর্তাপ্রতিপালকের অসন্তুষ্টি থেকে! যারা উঠে আসতে চায় বিশ্বাসত ও আস্থার সর্বোচ্চ পর্যায়ে, এই পৃথিবীতেও সুন্দর হবে তাদের জীবনটা। কেননা আল্লাহর এই পৃথিবী বিশাল বিস্তির্ণ; অবশ্যই আদায় করে দেওয়া হবে পরিপূর্ণভাবে যারা চেষ্টা সাধনা করেছিল (এ পথে) তাদের কর্ম-ফল, কোনো হিসাব করা হবে না। (৩৯ : ১০)
    ২২. তখন উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে সমগ্র পৃথিবী তার সৃষ্টিকর্তার উজ্জ্বল জ্যোতিতে এবং সামনে রেখে দেওয়া হবে সকলের জীবন-খাতা; আর নিয়ে আসা হবে নবী রাসূল এবং তাঁদের যথার্থ অনুসারী সাক্ষীদাতাগণকে; তারপর ফয়সালা দেওয়া হবে তাদের মধ্যে নাযিল করা মানদন্ড কিতাবের ভিত্তিতে এবং তারা এতটুকু বঞ্চিত হবে না। (৩৯ : ৬৯)
    ২৩. এরা কি দেখছে না যে, আমরা নিয়ে আসছি (তাদের) পৃথিবীকে (ক্রমান্বয়ে) ছোট্ট করে তার চারপাশ থেকে? আর আল্লাহই ফয়সালাদানকারী কেউ নেই খন্ডন করার মতো তাঁর সেই ফয়সালাকে এবং তিনি হিসাব গ্রহণে বেশী গতিসম্পন্ন। (১৩ : ৪১)
    ২৪. আর প্রতিষ্ঠিত করব তোমাদেরকেই এই পৃথিবীতে তাদের পরে; এটা তাদের জন্য (পুরস্কার স্বরূপ) যারা ভয় করে আমার সামনে দাড়িয়ে জবাবদিহি করার এবং ভয় করে আমার শাস্তির ওয়াদা। (১৪ : ১৪)
    ২৫. আর চলাফেরা করবে না পৃথিবীতে কোনো অহমিকার দম্ভ নিয়ে; নিশ্চয়ই তুমি কস্মিনকালেও ফাটাতে পারবে না মাটিকে আর না কিছুতেই পৌঁছাতে পারবে পবর্তের উচ্চতায়। এর প্রত্যেকটির মন্দ দিকটা তোমার প্রতিপালকের কাছে অপছন্দনীয়; এ বিষয়গুলো তারই অংশ বিশেষ যা অহী করেছেন তোমার প্রতি তোমার সৃষ্টিকর্তাপ্রতিপালকÑ জীবন দর্শন সংক্রান্ত (পৃথিবীতে মানুষ তার জীবনকে কোন নীতি-বোধের ওপর দাঁড় করাবে তারই সামগ্রীক নির্দেশনা) অতএব বানিয়ে নিওনা আল্লাহ সাথে (তাঁর মতো করে মানার) আর কোনো মান্য “ইলাহ” তাহলে নিক্ষিপ্ত হবে জাহান্নামে চির ধিকৃত চির বঞ্চিত হয়ে। (১৭ : ৩৭-৩৯)
    ২৬. এখানে যা কিছু দেওয়া হয়েছে তোমাদেরকে সামান্য ভোগ্য সামগ্রী ক্ষণস্থায়ী এই পৃথিবীর জীবরে আর যা আছে আল্লাহর কাছে তা যেমন উত্তম উৎকৃষ্ট তেমনি অনন্ত স্থায়ী তাদের জন্য যারা (তাঁর প্রতি) বিশ্বাস ও আস্থা রাখে এবং তাদের সৃষ্টিকর্তাপ্রতিপালকের ওপরেই সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। (৪২:৩৬)
    ২৭. আর যেদন উপস্থিত করানো হবে তাদেরকে যারা প্রত্যাখ্যান করেছিল আমাদের আহ্বান আগুনের সামনে, (বলা হবে) তোমরা তো নিয়ে নিয়েছ তোমাদের (অংশের) যা কিছু ভালো তোমাদের পৃথিবীর জীবনেই এবং ভোগ করেছ খুব মজা করই (সে জীবন) সেই সব দিয়ে, অতএব আজ তোমরা পুরস্কৃত হবে চরম লঞ্ছনার শাস্তি দিয়ে, তারই বিনিময়ে যে বড়ত্ব দেখাতে তোমরা পৃথিবীতে কোনো যোগ্যতা ছাড়াই আর সেই সব কারণেও জোনশুনে যেসব অবাধ্যতা (আল্লাহর) তোমরা করতে। (৪৬ : ২০)
    ২৮. যেনে রাখো! আর কিছু নয় এই পৃথিবীর জীবনটা শৈশবের কিছু কাল) শুধু খেলা আর খেলা, (কৈশোর, যৌবনে) কিছু চিত্ত-বিনোদন আর সৌন্দর্য চর্চা, তারপর (পূর্ণ বয়সে) তোমাদেরকে কার চাইতে বড় এবং আরো বাড়িয়ে তোলার প্রতিযোগীতা ধন-সম্পদ এবং সন্তান সন্ততির মান-মর্যাদার এক পশলা বৃষ্টির মতো মুগ্ধ করে দেয় কৃষককে তার ফলে গাজিয়ে ওঠে চারাগুলো, তারপর তা শুকিয়ে যায়; তখন তুমি দেখো তাকে হলদে হয়ে গেছে; তারপর তা হয়ে যায় খরকুটো। আর পরকালে (একদিকে) আছে কঠিন আযাব আর (অন্য দিকে) আল্লাহর ক্ষমা ও মার্জনা এবং সন্তুষ্টি। আর কিছু নয় এই পৃথিবীর জীবনটা প্রতারণাময় সামান্য একটু আয়োজন ছাড়া।
    ২৯. থাকতে দাও তাদেরকে তাদের অবস্থায় যারা ধরে নিয়েছে তাদের জন্য আল্লাহর মনোনীত জীবন-পদ্ধতিতে একটা খেলা এবং (পবিত্র অনুভুতির) একটা (মানসিক) বিনোদন, আসলে ধোঁকায় ফেলে দিয়েছে, ওদেরকে এই পৃথিবীর জীবন; তবে (এই লোকদের) স্মরণ করিয়ে দিতে থাকো (পৃথিবীতে তাদের আসল ভ’মিকা ও করণীয়) এর দ্বারা (কোরআনের বাণী ও বার্তা শুনিয়ে শুনিয়ে) এ ব্যাপারে যেন ধরা পড়ে না যায় কেউ সেই সব নিয়ে যা সে (পৃথিবীতে) উপার্জন করেছে; (তখন কিন্তু) কেউ হবে না তার জন্য (একমাত্র) আল্লাহ ছাড়া কোনো অভিভাবক আর না কোনো সুপারিশকারী; তখন যদি জরিমানা দিতে চায় সবকিছুর বিনিময়ে, গ্রহণ করা হবে না তার কাছ থেকে তা; এই লোকেরা তারাই যারা ধরা পড়ে গেছে সেই সবের জন্য যা যা তারা উপার্জন করেছে; এদের জন্য পানীয় টগবগ করা পানি আর অত্যন্ত কঠিন কষ্টের শাস্তি সেই প্রত্যাখ্যান ও অস্বীকারের জন্য। (৬ : ৭০)
    ৩০. বরং প্রাধান্য দাও তোমরা এই পৃথিবীর জীবনকেই; যেখানে পরবর্তী অনন্ত পৃথিবী যেমন উম্মত তেমনি অনন্ত স্থায়ী। (৮৭ : ১৬-১৭)
    বি:দ্র: আয়াতের অনুবাদ মোস্তফা ওয়াহিদুজ্জামান অনুদিত বায়ানুল কোরআন থেকে নেওয়া।
    - See more at: http://islamicnews24.net/110023-2/#sthash.gAknBkbT.dpuf