আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শহীদ বরকত এর পরিবারকে সম্মাননা প্রদান করে ছাত্রশিবির গাজিপুর মহানগরী ।
সালাম লিখেছে মা,
রফিক লিখেছে ম্
বরকত লিখেছে মা,
আমরা পারিনি তাই তাদের ত্যাগের দান
কখনো ভুলে যাব না ।
“মাগো ওরা বলে, সবার কথা কেড়ে নেবে”- ওরা চেয়েছিল সবার কথা কেড়ে নিতে, চেয়েছিল “মা”- এর মত শ্রুতিমধুর নামকে ছিনিয়ে নিতে। তবে তারা পারেনি। তারা হেরে গিয়েছিল বাংলার কিছু দামাল সন্তানদের কাছে। ছেলেহারা সেই মায়েদের অশ্রুতে ভিজেছিল ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারী। সেই অশ্রু ভেজা চোখ জাগিয়ে ছিল ভাষা কেড়ে আনার অঙ্গীকার, সেখান থেকেই আবির্ভাব হয়েছিল দেশকে স্বাধীন করার আকাঙ্ক্ষা।
আজ আমরা বাংলায় কথা বলি, একটি স্বাধীন দেশ এ বসবাস করি। আর গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি সালাম,রাফিক,জব্বার, বরকতদের মত সেই সব দামাল ছেলেদের আত্মত্যাগ।
“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি”
“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি”
অধ্যাপক গোলাম আজমের পিঠে চড়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই দাবী সম্বলিত পোষ্টার দেয়ালে লাগিয়েছি। এ মন্তব্যটি ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের। কালের পরিক্রমায় সৃষ্ট ভাষা সৈনিকদের ভীড়ে আমরা ভূলে গেছি ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে হরতাল সফল করতে গিয়ে অধ্যাপক গোলাম আযমের গ্রেফতার হওয়ার কথা। ইতিহাস থেকে মুছে দিয়েছি ১৯৪৮ সালের ২৭ নভেম্বরে ডাকসুর জিএস অধ্যাপক গোলাম আজম ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে রাষ্টভাষা বাংলার দাবী সম্বলিত ঐতিহাসিক স্মারকলিপি পাঠ করার কথা। ভূলে গেছি ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের উত্তাল সময়ে অধ্যাপক গোলাম আজম রংপুর কারমাইকেল কলেজে অধ্যাপনা কালে, সেখানে রাজনৈতিক কর্মী ও ছাত্রদের নিয়ে সমাবেশের আয়োজন করায় তার পুনরায় গ্রেফতার হওয়ার কথা।
যাদের আত্নত্যাগ ও আত্নদানের মধ্যদিয়ে মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারছি, আজ তাদের শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি। আল্লাহ যেন তাদের এই অসামান্য আত্নত্যাগ ও আত্নদানের বিনিময়ে সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করেন।
যাদের আত্নত্যাগ ও আত্নদানের মধ্যদিয়ে মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারছি, আজ তাদের শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি। আল্লাহ যেন তাদের এই অসামান্য আত্নত্যাগ ও আত্নদানের বিনিময়ে সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করেন।
একুশে ফেব্রুয়ারি। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সর্বস্তরের মানুষ গতকাল উপস্থিত হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। ফুলেল শ্রদ্ধায় স্মরণ করলের মাতৃভাষার জন্য জীবন দেয়া অমর বীর শহীদদেরকে। এই শহীদদের মহান আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই অমর একুশে গ্রন্থমেলার আয়োজন। তাই সকাল থেকে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষগুলো শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ঘুরে যেতেও ভুল করলেন না।
অমর একুশে গ্রন্থমেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি প্রতি বছরই একুশে ফেব্রুয়ারি ঘিরে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে থাকেন। এছাড়া এই একটি দিনের জন্য থাকে বিশেষ সময়সূচি। এবারো তার ব্যতিক্রম হলো না। অন্যান্য বছরের ন্যায় আজ রোববার সকাল ৮টা থেকেই খুলল মেলার দ্বার। চলে রাত ৮টা পর্যন্ত। রাত থেকেই রাজধানীর সবগুলো সড়কের গন্তব্য ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। আর সেই স্রোত সকালে গিয়ে মিলল অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। রাত অবধি তা অব্যাহত ছিল।
সকাল থেকেই গ্রন্থমেলায় ছিল মানুষের সরব উপস্থিতি। সকলের পোষাকে-আষাকে ছিল শোক প্রকাশের প্রতীক হয়ে ওঠা সাদা-কালোর উপস্থিতি। মেয়েরা সাদা-কালোর মিশেলে শাড়ি কিংবা সালোয়ার কামিজ পরেছিলেন। ছেলেদের পরনে ছিল পায়জামা-পাঞ্জাবি কিংবা সাদা-কালোর মিশেলে অন্য কোনো পোষাক। পুরো মেলাঙ্গন জুড়েই এমন দৃশ্য ছিল চোখে পড়ার মত। অনেকের মাথায় ছিল জাতীয় পতাকা এবং একুশের নানা ধরণের স্লোগান লেখা সম্বলিত ব্যান্ড।
তবে এর মধ্যেই কিছু অনাকাঙ্খিত দৃশ্যও মানুষের চোখ এড়িয়ে যায়নি। অনেক তরুণ-তরুণীই মেলায় এসেছিলেন অনেকটা উৎসবের সাজে। মেয়েদের পরনে ছিল লাল-গোলাপী কিংবা অন্যকোন রঙের পোষাক। মাথায় ছিল ফুলের ব্যান্ড। ছেলেদের পরণেও ছিল এমনই পোষাক। যে পোষাকগুলো গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বসন্ত উৎসব কিংবা ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে দেখা গিয়েছিল।
ওদিকে মাসের সবচেয়ে কাঙ্খিত দিন হওয়া সত্বেও বইয়ের বেচাকেনা নিয়ে হতাশ স্টল সংশ্লিষ্টরা। কয়েকটি স্টলের প্রকাশক এবং বিক্রয়কর্মীরা জানালেন, একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে যে পরিমাণ মানুষ মেলায় আসার কথা ছিল সে পরিমাণ আসেনি। বিক্রিও তাই আশানুরূপ হয়নি। গত বছর প্রতিকূল পরিস্থিতি থাকা সত্ত্বেও দিবসটিতে বইয়ের বিক্রি এবং মানুষের উপস্থিতি ছিল অনেক। এবার সে তুলনায় মানুষের উপস্থিতি তুলনামূলক কম বলে দাবি তাদের।
নতুন বই : অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২১তম দিনে গতকাল নতুন বই এসেছে ২১০টি। মেলার শুরু থেকে এ পর্যন্তনতুন বই এসেছে দুই হাজার ৬০৬টি। এবার মেলায় আসা নতুন বইয়ের মধ্যে রয়েছে, ঝিঙেফুল থেকে সিরাজুল ইসলাম মুনিরের ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্প’, নওরোজ থেকে তাসকিন ফাহমিনার ‘প্রীণা’, পুথিনিলয় থেকে মুহাম্মদ মিজানুর রহমানের ‘প্রিয়তা’, ঐতিহ্য থেকে ড. সুলতানা জেসমিনের ‘বাংলাদেশের শিক্ষানীতি ও নারীশিক্ষা’, প্রান্ত থেকে ড. মো. মোকলেছুর রহমানের ‘কৃষ্ণগহবর এবং শিশু মহাবিশ্ব ও অন্যান্য রচনা’ এম উমর ফারুকের ‘যে রাতের দিন হয় না’ প্রভৃতি।