Tagged Under:

শিশু হত্যা বন্দ কর ।

By: Unknown On: 10:23
  • Share The Gag


  • বন্ধ হচ্ছে না শিশুহত্যা
    প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো প্রান্ত থেকে আসছে মর্মন্তুদ সংবাদ। সন্তানঘিরে মা-বাবার রঙিন স্বপ্ন তছনছ হচ্ছে। শিশুদের জন্য আগামী পৃথিবী ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। পারিবারিক, সামাজিক বিরোধ, জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্ব, মুক্তিপণের জন্য টার্গেট করা হচ্ছে শিশুদের। পাওয়া-না পাওয়ার দ্বন্দ্ব, সম্পর্কের জটিল সমীকরণ বোঝার আগে শিশুদের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে ঘাতকরা। একের পর এক শিশু খুন করা হলেও যেন কারও ঘুম ভাঙছে না। শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য মতে, গত ১৩ মাসে সারাদেশে ৩২১ শিশুকে হত্যা করা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে হত্যা করা হয়েছে ২৯ জনকে। এ ছাড়া ২০১৫ সালে ২৪০ শিশুকে অপহরণ করা হয়। তাদের মধ্যে ১৬৭ শিশুকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ৪০ জনকে। বাকিদের কোনো খোঁজ নেই। সর্বশেষ সিলেটের হবিগঞ্জে চার শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করে মাটির নিচে পুঁতে রাখা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. জিয়া রহমান সমকালকে বলেন, নানা কারণে
    শিশুরা টার্গেট হচ্ছে। অনেকে আগ্রাসী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ চরমভাবে প্রকাশ করছে। আকাশ সংস্কৃতির কুপ্রভাব অনেকের মধ্যে নেতিবাচক পড়ছে। কেউ আবার স্বল্প সময়ে অনেক টাকা-পয়সার মালিক হতে চায়। এ ছাড়া সামাজিক কাঠামোর মধ্যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি ঢুকে পড়েছে। তাই শিশুদের হত্যা করেও অনেকে পার পেয়ে যাচ্ছে।
    জিয়া রহমান আরও বলেন, এক সময় শিশুদের হত্যা বা নিপীড়ন করা হলেও সমাজ থেকে তা কঠোরভাবে প্রতিরোধ করা হতো না। এখন গণমাধ্যম সে দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করছে।
    মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সালমা আলী সমকালকে বলেন, যারা শিশু হত্যা ও নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে ব্যবস্থা নয়, সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। রাজন বা রাকিব হত্যার বিচার নয়, সব শিশু হত্যার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।
    পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, শিশুদের টার্গেট করে যে কোনো অপরাধী চক্রকে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ সব সময় সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বিভিন্ন সময় শিশু অপহরণের সঙ্গে জড়িত বেশ কিছু চক্রকে আটক করা হয়েছে।
    শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য মতে, ২০১৫ সালে সারাদেশে হত্যা করা হয় ২৯২ শিশু, ২০১৪ সালে ৩৬৬ জন। ২০১৫ সালে ৫২১ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। ২০১৪ সালে ১৯৯ জন। ২০১৫ সালে ২৪৩ ও ২০১৪ সালে ২০৯ শিশু অপহরণের শিকার হয়। তাদের মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ৫২ শিশুকে ও উদ্ধার করা হয় ৯২ জনকে।
    অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, সমাজে সবচেয়ে নিরীহ শিশুরা। বিশেষ করে আর্থিকভাবে দুর্দশাগ্রস্ত পরিবারের শিশুরা বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে। অনেক শিশুকে তার মা-বাবা সঠিকভাবে দেখভাল করতে পারেন না। মুক্তিপণ, পাচার, ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল, পারিবারিক-সামাজিক বিরোধের শিকার হয়ে শিশুরা প্রাণ হারাচ্ছে। শিশুদের বেড়ে ওঠার মতো ভালো পরিবেশও রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে পারছে না। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা ও প্রকৃত শিক্ষার অভাবে অনেক শিশুকে শ্রমিক হিসেবে কাজে লাগানো হয়। মা-বাবা তাদের অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। এর পর কর্মস্থলে তারা নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়। আবার কুরুচিসম্পন্ন কিছু মানুষের বিকৃত রুচির টার্গেট হচ্ছে শিশুরা। এমনকি তুচ্ছ কারণেও অনেক শিশুকে হত্যা করা হচ্ছে। সামাজিক অবক্ষয়ের কারণেও শিশু অপহরণসহ নানা অপরাধমূলক ঘটনা ঘটছে। আবার সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের সদস্যরাও শিশুদের টার্গেট করে অপহরণ করছে। সহজেই কোনো উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য স্বজনের স্নেহ-ভালোবাসার সবচেয়ে 'দুর্বল জায়গা'য় আঘাত করা অপরাধের একটি পুরনো কৌশল।
    সম্প্রতি কিছু নৃশংস ঘটনা : গত ১৪ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরে কাশিমপুর এলাকায় সোলায়মান নামে চার বছরের এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। এনজিও থেকে ঋণ নেওয়াকে কেন্দ্র করে বাবার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় নির্মল রবিদাস নামে এক শিশুকে হত্যা করা হয়। গত ১০ ফেব্রুয়ারি কুড়িগ্রামের শিমুলবাড়ি উপজেলায় মাদ্রাসার এক শিশুকে অপহরণ করা হয়। ৮ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের ছাতকে ১০ বছরের এক শিশুর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিন মৌলভীবাজারের এক নবজাতকের লাশ পাওয়া যায়। ৫ ফেব্রুয়ারি সাভারের আশুলিয়ায় ইমন নামে এক স্কুলছাত্র নিখোঁজ হয়। ৩১ জানুয়ারি শেরপুরে নূর আলম নামে এক স্কুলছাত্রের লাশ পাওয়া যায়। গত ২ ফেব্রুয়ারি কেরানীগঞ্জে স্কুলছাত্র আবদুল্লাহর লাশ উদ্ধার করা হয়। ৯ ফেব্রুয়ারি র‌্যাবের সঙ্গে 'বন্দুকযুদ্ধে' ওই ঘটনার মূল হোতা মোতাহার নিহত হয়। চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি ঝিনাইদহের শৈলকূপার কবিরপুর মসজিদপাড়ায় তিন শিশুকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। পারিবারিক কলহের জের ধরে ইকবাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি নিজের ভাই ও বোনের তিন সন্তানকে পুড়িয়ে হত্যা করে। নিহত শিশুরা হলো_ আমিন হোসেন (৭), শিবলু হোসেন (৯) ও মাহিম হোসেন (১৩)। আমিন হোসেন প্রথম শ্রেণী, শিবলু তৃতীয় শ্রেণী ও মাহিম সপ্তম শ্রেণীতে পড়ত। ইকবালকে প্রতিবেশীরা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। সে সিঙ্গাপুর থাকত। সিঙ্গাপুর থেকে ভাই দেলোয়ারের কাছে টাকা পাঠাত। দেশে এসে ওই টাকা ফেরত চায় সে। দেলোয়ার টাকা না দেওয়ায় সে তিন শিশুকে হত্যা করে। ৩০ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জ সদরের মালির পাথর এলাকার একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে নীরব (১১) নামে এক মাদ্রাসাছাত্রের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নীরব মালিরপাথর মাদ্রাসায় পড়ত। ২৯ জানুয়ারি খেলার সময় সে নিখোঁজ হয়। ২৮ জানুয়ারি শুক্রবার রাতে রংপুর নগরের আদর্শপাড়া থেকে রাহিমুল ইসলাম রনক (১১) নামে এক শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়। অপহরণের প্রায় দুই মাস পর তার লাশ উদ্ধার হয়। মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের তেপানি গ্রামের একটি জমি থেকে গর্ত খুঁড়ে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ১ ডিসেম্বর বাড়িতে খেলার সময় সে নিখোঁজ হয়। আর্থিক লেনদেনের বিষয় জড়িত বলে পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র জানায়। শিশুটির খোঁজ পেতে তার মা একাধিকবার সংবাদ সম্মেলনও করেন। ২৮ জানুয়ারি শুক্রবার ঢাকার ধামরাইয়ের শাকিল (১২) ও ইমরান (১০) নামে দুই স্কুলছাত্রের লাশ উদ্ধার করা হয়। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের মোড়ভাঙ্গা গ্রামের একটি লেবুক্ষেত থেকে তার লাশ উদ্ধার হয়। পুলিশ ও পরিবার বলছে, মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে তাদের হত্যা করা হয়।