: বিচারাধীন মামলার বিপুল সংখ্যার বিপরীতে বিচারক স্বল্পতায় উচ্চ আদালতের সব রায় বাংলায় দেওয়া ‘কষ্টকর’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। গতকাল রোববার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে এসে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “উচ্চ আদালতে মামলার সংখ্যা বেশি। বিচারকের স্বল্পতাও রয়েছে। নিয়মিত বিচারকাজ করতেই দেরি হয়, এই দীর্ঘসূত্রতা কাটাতে আমরা চেষ্টা করছি।”
এর মাঝেই অনেক বিচারক বাংলায় বেশ কিছু রায় দিয়েছেন জানিয়ে বিচারপতি সিনহা বলেন, “একজন বিচারককে অনেক সময় দিনে একশ মামলার রায় ও আদেশ দিতে হয়। সবগুলো যদি আমরা বাংলাতে দিতে বলি, তাহলে সেটা কষ্টকর হয়ে যাবে।”তাছাড়া অনেক আইন ও দেশি-বিদেশি রেফারেন্স ইংরেজিতে হওয়ায় বাংলায় রায় দেওয়া অনেক ক্ষেত্রে জটিল হয়ে ওঠে বলেও জানান তিনি।
১৯৭৩ সালের বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট (হাইকোর্ট বিভাগ) রুলস-এ সুপ্রিম কোর্টের যে কোনো আবেদন ইংরেজিতে করার বিধান ছিল। সেই নিয়ম সংশোধন করে সেখানে ‘ইংরেজি অথবা বাংলায়’ আবেদন করার কথা বলা হলেও এখনও অধিকাংশ আবেদনও নথির কাজ চলে ইংরেজিতে।
সরকার ও প্রশাসনের সব দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি গাড়ির নম্বরপ্লেট, সাইনবোর্ড, নামফলক ও টেলিভিশনে প্রচারিত সব বিজ্ঞাপন বাংলায় লেখার বিষয়ে হাই কোর্ট থেকে আদেশ এসেছে একাধিকবার। রেডিও- টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে বা বিজ্ঞাপনে বাংলা ভাষার বিকৃতি বন্ধে রুলও জারি হয়েছে। তবে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করার উদ্যোগ উচ্চ আদালতেই গতি পায়নি।
সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও এ বি এম খায়রুল হক ছাড়াও হাই কোর্টের কয়েকজন বিচারক বিভিন্ন মামলার রায় দিয়েছেন বাংলা ভাষায়। হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি এআরএম আমিরুল ইসলাম চৌধুরী তার সব আদেশ, নির্দেশ ও রায় বাংলায় দিতেন বলে এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন খায়রুল হক। প্রধান বিচারপতি থাকাকালে তিনি বিভিন্ন সময়ে বিচারকদের বাংলায় রায় লিখতে উৎসাহ যুগিয়েছেন। কিন্তু পরিস্থিতি বিশেষ বদলায়নি।
সুপ্রিম কোর্ট জাদুঘরে দেড় শতাব্দী আগে বাংলায় দেওয়া একটি রায় রয়েছে, যে রায়ের প্যাডের লোগো ফার্সিতে। আদালতের সব কার্যক্রমে বাংলা ভাষা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে কয়েক বছর আগে সংসদে একটি প্রস্তাব এনেছিলেন একজন এমপি। পরে তা আর এগোয়নি।
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, “ইংরেজিতে রায় দেওয়াই প্রচলিত। অনেক আইনও ইংরেজিতে। দেশ ও দেশের বাইরের প্রায় সব রেফারেন্স ইংরেজিতে। এই অবস্থায় বাংলায় রায় দিতে হলে আগে জনবল সঙ্কট কাটাতে হবে। এরপর বিষয়টি চিন্তা করা যাবে।”
শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর সময় হাই কোর্ট ও আপিল বিভাগের অর্ধশত বিচারক প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ছিলেন।