Tagged Under:

মানুষ হত্যা মানবজাতিকে হত্যার তুল্য

By: Unknown On: 10:24
  • Share The Gag

  • বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যে নবীর আগমন ঘটেছিল, তিনি নিজে ইসলামের দাওয়াতি অভিযানে কাউকে ইসলাম গ্রহণের জন্য জোরজবরদস্তি করেননি। যার কাছে দাওয়াত নিয়ে গেছেন, সে ছোট হোক বা বড় হোক, তার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেই দিয়েছেন তিনি দাওয়াত। রাষ্ট্রনায়ক বা দলপতিদের কাছে তিনি বিশেষ দূত পাঠিয়ে চিঠির মাধ্যমে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। 
    আর সেই নবী মুহাম্মদ সা:-এর উম্মত আর ইসলামের সঠিক অনুসারী দাবি করে বোমা মেরে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে, মানুষ হত্যা করে ইসলাম কায়েমের অপচেষ্টা করার মানে কী? যে ধর্মের জয়গান শুনে, যে ধর্মের অনুসারীদের চরিত্রে অভিভূত হয়ে অমুসলিমরা মুসলমান হওয়ার প্রয়াস পেয়েছিল। সেই ধর্মকে বিশ্ববাসীর কাছে কলঙ্কিত করা কোনো মুসলমান বা ইসলামি সংগঠনের কাজ হতে পারে না। 
    দুঃখজনক হলেও সত্য, যে জাতি এক সময় পৃথিবীর বুকে বিশেষ এক শক্তি নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াত। যে জাতির সাহসী হুঙ্কারে বাতিলেরা ভয়ে কাঁপত। যে জাতির নাম শুনলে আবু জেহেল, উতবা, শায়বার মতো শীর্ষ কাফের নেতারা লেজ গুটিয়ে পালাত। সে জাতি আজ পরস্পর দাঙ্গা-হাঙ্গামায় লিপ্ত হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে একদল ইসলাম কায়েমের নামে বোমাবাজি আর মানুষ হত্যা করে বিশ্বব্যাপী শান্তির ধর্ম ইসলামকে কলঙ্কিত করার জন্য অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু তারা জানে, ইসলামের নামে অশান্তি-অরাজকতা সৃষ্টি করা বৈধ নয়, তবুও কোনো এক পরাশক্তির খবরদারিতে তারা এ কাজে নেমেছে, তা একমাত্র সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন। তবে তাদের এই হীন চেষ্টা কখনো বাস্তবে রূপ নেবে না। 
    ইসলাম শান্তির ধর্ম, সব ধরনের অশান্তি, বিশৃঙ্খলা, মারামারি, হানাহানি, জুলুম-নির্যাতন বন্ধ করে মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা প্রকাশের জন্য এবং নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষের জীবনের নিরাপত্তার জন্য ইসলামের আগমন ঘটেছে। জাহেলি যুগে তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুনোখুনি, হানাহানি এবং রক্তের বদলে রক্ত নিতে গিয়ে অসংখ্য নিরপরাধ মানুষের জীবনহানি ঘটত এবং বছরের পর বছর ধরে যুদ্ধবিগ্রহ চলত। ইসলামের মহান প্রবর্তক বিশ্বশান্তির মূর্তপ্রতীক হজরত মুহাম্মদ সা: এসে এ সব কিছু সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন। বিদায় হজের ভাষণে তিনি অত্যন্ত কঠোরভাবে ঘোষণা করলেন : হে মানবমণ্ডলী! আজকের এই দিন, এই মাস, এই শহরটি যেমন সম্মানিত, তেমনি তোমাদের রক্ত, তোমাদের ইজ্জত, তোমাদের সম্পদ পরস্পরের প্রতি কিয়ামত পর্যন্ত সম্মানিত।’
    হাল জামানায় বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মানুষ আজ নির্যাতিত-নিপীড়িত। আত্মঘাতী, বিস্ফোরণ, বোমা হামলা আর নামে-বেনামের জঙ্গি সংগঠনের আতঙ্কে নির্ঘুম রজনী পার হচ্ছে। আতঙ্কে যুক্ত হয়েছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। 
    অন্যায়ভাবে একজন মানুষ হত্যা করাকে কুরআনে কারিমে ‘সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা’ করার নামান্তর আখ্যায়িত করা হয়েছে। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনুল কারিমে অন্যায়ভাবে হত্যা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপরাধ সম্পর্কে ইরশাদ করেনÑ ‘যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করল সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকেই হত্যা করল, আর কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করল সে যেন সব মানুষের প্রাণ রক্ষা করল।’ (সূরা মায়েদা : ৩২)। অন্যায়ভাবে হত্যার শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনÑ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে চিরস্থায়ী হবে এবং আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হবেন, তাকে লানত করবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।’ (সূরা নিসা : ৯৩)।
    ইসলাম ধর্মে হত্যার প্রতি প্ররোচনাদানকারী হিসেবে হিংসা-বিদ্বেষ-ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে বলেছে। এ বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘তোমরা একে অপরের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করো না, হিংসা করো না এবং একে অপরের পেছনে লেগে থেকো না। আল্লাহর বান্দা সবাই ভাই ভাই হয়ে যাও। (সহি বুখারি)। এমনকি হত্যার প্রাথমিক বিষয় তথা অস্ত্র দিয়েও কাউকে ভয় দেখাতে নিষেধ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন তার ভাইয়ের দিকে অস্ত্র তাক না করে। কারণ সে জানে না, হয়তো শয়তান তার হাত থেকে তা বের করে দিতে পারে, ফলে সে জাহান্নামের গহ্বরে নিক্ষিপ্ত হবে।’ (সহি বুখারি)। মহান আল্লাহ তায়ালা তার সৃষ্টিজীবকে পুড়িয়ে মারার অধিকার কাউকে দেননি। আগুনে পুড়িয়ে মারার অধিকার একমাত্র আল্লাহ তায়ালারই। আগুনে পুড়িয়ে মারার ফলে একসাথে কয়েকটি অপরাধ সংঘটিত হয়, এর কোনো কোনোটি তো শিরকের পর্যায়ভুক্ত। কাউকে আগুনে পুড়িয়ে মারা বা মারার চেষ্টা জঘন্যতম অপরাধ। যারা এ ধরনের কাজ করবে, আল্লাহর বিধান লঙ্ঘনের কারণে তারা আল্লাহর রহমত থেকে অবশ্যই বঞ্চিত হবে এবং রাসূল সা:কে না মানার কারণে তারা কিয়ামতের দিন রাসূল সা:-এর শাফায়াত পাবে না। হাদিস শরিফে আছে, হজরত রাসূলুল্লাহ সা: কোনো মানুষ, জীবজন্তু বা কোনো ফলদ গাছপালাকে আগুনে পোড়াতে নিষেধ করেছেন। রাসূলে করিম সা: বলেন, ‘আগুন দ্বারা কেবল আল্লাহই শাস্তি দেবেন। আল্লাহ ছাড়া আর কারো আগুন দ্বারা শাস্তি দেয়ার অধিকার নেই।’ ( বুখারি ও আবু দাউদ)।
    তেমনি অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা মহাপাপ। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, ‘যে ইচ্ছাকৃতভাবে মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম; তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।’ (সূরা আন নিসা : ৯৩)।
    কিন্তু আজ আমাদের মুসলিম ভাইবোনদের অহরহ আগুনে পোড়ানো হচ্ছে এবং অন্যায়ভাবে ধরে নিয়ে আহত ও নিহত করা হচ্ছে। জীবন্ত মানুষকে পেট্রলবোমা, গানপাউডার ইত্যাদি দিয়ে জ্বালানো হচ্ছে। ইসলামের বিধানের তোয়াক্কা না করে, মানবতাকে পায়ে পিষে, পশুত্বের কোনো স্তরে পৌঁছলে এমন কাজ করা সম্ভব তা বোধগম্য নয়। এসব জঘন্যতম কর্মকাণ্ড দেখলে শয়তানও ঘৃণা ও লজ্জা পায়। আমরা আজ কোথায় বাস করছি? আমরা কি সভ্য জগতের বাসিন্দা আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব? নাকি অন্য কিছু, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না!
    ইসলাম কোনোভাবেই অন্যের জানমালের ক্ষতি সাধন সমর্থন করে না। যারা মানুষের জানমালের ক্ষতি করে ইসলাম তাদের প্রকৃত মুমিন বলে স্বীকৃতি দেয় না। রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন- প্রকৃত মুমিন সে ব্যক্তি, যার মুখ ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।’ (মুসলিম)।
    ইসলাম তার সূচনালগ্ন থেকে সন্ত্রাসবাদ তো দূরের কথা, কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলাকে সমর্থন করেনি আর করবেও না। বোমাবাজি ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ইসলাম কায়েম করার কোনো নজির নেই। এমনকি ইসলামের দাওয়াতি অভিযানে গিয়েও যদি অমুসলিম কোনো সম্প্রদায়ের হাতে কষ্ট পেয়ে থাকে, তবুও সেই সম্প্রদায়ের লোককে অভিশাপ করা মুসলমানের জন্য সমীচীন নয়। কারণ, তায়েফের ময়দানে নবী মুহাম্মদ সা:-এর ওপর কাফের জনগোষ্ঠীর নির্যাতনে জুতো পর্যন্ত রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল, তদুপরি তিনি বদদোয়া তথা অভিশাপ দেননি।
    - See more at: https://www.blogger.com/blogger.g?blogID=2699739278714981299#editor/target=post;postID=8582826301220707756